আর্মেনিয়া (আর্মেনীয়: Հայաստան, হায়াস্তান) পশ্চিম এশিয়ার একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। ককেশাস অঞ্চলে অবস্থিত এই দেশটির উত্তরে জর্জিয়া, পূর্বে আজারবাইজান, দক্ষিণে ইরান এবং আজারবাইজানের অন্তর্ভুক্ত নখচিভান, এবং পশ্চিমে তুরস্ক অবস্থিত। ইয়েরেভান এর রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। আর্মেনীয়রা নিজেদের “হায়” (Հայ) বলে ডাকে।
ইতিহাস: আর্মেনিয়ার ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ। খ্রিস্টপূর্ব ৮৬০ অব্দে উরার্তু রাজ্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। পরবর্তীকালে সেলেউসিদ সাম্রাজ্যের পতনের পর ১৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে স্বাধীন আর্মেনীয় রাজ্যের সূচনা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দীতে টাইগ্রেনিস দ্য গ্রেট-এর অধীনে আর্মেনিয়া তার সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছে। ৩০১ খ্রিস্টাব্দে, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে এটি খ্রিস্টধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে গ্রহণ করে এবং আর্মেনীয় অ্যাপোস্টলিক চার্চ প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সাম্রাজ্যের শাসনামলে আর্মেনিয়া বিভক্ত থাকলেও এর জাতীয় পরিচয় টিকে ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, অটোমান সাম্রাজ্যে আর্মেনীয়দের উপর আর্মেনীয় গণহত্যা সংঘটিত হয়, যা ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় হিসাবে চিহ্নিত। ১৯১৮ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য স্বাধীনতা লাভ করে এবং ১৯২০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে চলে যায়। ১৯৯১ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর আর্মেনিয়া পুনরায় স্বাধীনতা লাভ করে।
ভূগোল: আর্মেনিয়া ককেশাস পর্বতমালায় অবস্থিত। দেশটির ভূমি প্রধানত পাহাড়ী এবং উঁচু। আরাগাৎস পর্বতশৃঙ্গ এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ (৪০৯০ মিটার)। সেভান হ্রদ এর গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য।
জনসংখ্যা ও সংস্কৃতি: আর্মেনিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষ। ৯৮% এর বেশি লোক আর্মেনীয়, এবং আর্মেনীয় ভাষা রাষ্ট্রভাষা। খ্রিস্টধর্ম প্রধান ধর্ম। আর্মেনীয় সংস্কৃতি সমৃদ্ধ এবং ঐতিহ্যবাহী, পারিবারিক বন্ধন ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ আর্মেনীয়দের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থনীতি: স্বাধীনতার পর আর্মেনিয়ার অর্থনীতি ধীরে ধীরে উন্নতি লাভ করেছে। তবে ১৯৮৮ সালের ভূমিকম্প এবং ১৯৯০ এর দশকের নাগোর্নো-কারাবাখ যুদ্ধ এর অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তামা, সোনা, জিন্ক এবং সীসা উৎপাদন এখানে গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটন ও তথ্যপ্রযুক্তি এখন অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসাবে উঠে আসছে।
উল্লেখযোগ্য ঘটনা: ১৯১৫ সালের আর্মেনীয় গণহত্যা, ১৯৮৮ সালের ভূমিকম্প, নাগোর্নো-কারাবাখ যুদ্ধ (১৯৯০ এর দশক) ইত্যাদি আর্মেনিয়ার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।