রাখাইন রাজ্যে (আরাকান) ভিত্তিক একটি জাতিগত জাতীয়তাবাদী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি (AA), ২০০৯ সালের ১০ই এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউনাইটেড লীগ অফ আরাকান (ULA) এর সামরিক শাখা হিসেবে এটি কার্যকর। প্রায় এক যুগ ধরে মিয়ানমার সরকারের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সংগঠনটি লড়াই করে আসছে। রাখাইন বৌদ্ধদের এই সংগঠন তাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ধরে রাখার দাবি জানায়। বর্তমানে মেজর জেনারেল তোয়ান মারত নাইং এর নেতৃত্বে সংগঠনটি কাজ করে।
প্রাথমিকভাবে কাচিন স্বাধীনতা সেনাবাহিনী (KIA) এর সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর (তাতমাডো) বিরুদ্ধে লড়াই করে AA। পরবর্তীতে ২০০৯ থেকে রাখাইন রাজ্যে নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে। ২০১৪ সালে ১৫০০ এর বেশি সৈন্য ছিল বলে জানা যায়, যারা বাংলাদেশ সীমান্তের কাছেও মোতায়েন ছিল। বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের সৈন্য সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, ২০২০ সালে ৩০,০০০ এর বেশি এবং ২০২৪ সালে ৩৮০০০ এর বেশি সৈন্য থাকার দাবি করা হয়েছে।
AA এর লক্ষ্য রাখাইন জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ, জাতীয় পরিচয় ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং রাখাইন জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষা করা। ২০১৫ সালে কাচিন ও রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে তীব্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এছাড়াও ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ২০১৬ সালে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের ও বার্মিজ নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের পর প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করে AA। ২০২০ সালে মিয়ানমার সরকার AA কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে, পরবর্তীতে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল জুন্টা ২০২৪ সালে আবারো ঘোষণা করে।
২০২১ সালের আগস্টে এক সাক্ষাৎকারে AA এর কমান্ডার ইন চিফ স্পষ্ট করে জানান যে, সশস্ত্র বিপ্লবের রাজনৈতিক লক্ষ্য হল আরাকানের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করা। বিভিন্ন সময়ে AA মিয়ানমার সরকারের সাথে যুদ্ধবিরতি করেছে, কিন্তু বারবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ম্রাউক-ইউ, থ্যান্ডও এবং মাউঙ্গডাও সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে AA। ভারত সরকারের সাথে AA এর সম্পর্ক উন্নত হচ্ছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশের সাথে AA এর সম্পর্ক এখনও অনিশ্চিত, তবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে AA এর সাথে যোগাযোগের সম্ভাবনা তদন্ত করা হচ্ছে। AA বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে।