জাতীয় অধ্যাপক ড. আমিনুল হক: একজন মহান শিক্ষাবিদ ও মৎস্যবিজ্ঞানীর জীবনযাত্রা
ড. এ.কে.এম. আমিনুল হক (১৯২৯-২০২২) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, মৎস্যবিজ্ঞানী এবং জাতীয় অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ২রা জুলাই ১৯২৯ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার চরজামাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আশরাফ আহমেদ এবং মাতার নাম আমেনা আশরাফ। শিক্ষাজীবনে তিনি অসাধারণ মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ১৯৪৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকে এবং ১৯৪৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এস.সি. এবং পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এস.সি. ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৭ সালে যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০-১৯৭১ সালে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে SEATO পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ লাভ করেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত দুটি পূর্ণ মেয়াদে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৬ সালে জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং শাহাবুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন মৎস্য বিভাগের মেরিন পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছিলেন।
১৯৬৭ সালে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে 'মৎস্যবিদ্যা' বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন, যা উপমহাদেশে প্রথম মৎস্য অনুষদ। তিনি 'বাংলাদেশের মৎস্যবিদ্যা শিক্ষার জনক' হিসেবে পরিচিত। তিনি ফিশারিজ সোসাইটি অব বাংলাদেশ (FSB) প্রতিষ্ঠা করেন এবং বাংলাদেশ জার্নাল অব ফিসারিজ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক ছিলেন। তিনি ফিশারিজ বায়োলজিতে, বিশেষ করে সিটাসিয়ানে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তিনি অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে ইউনেস্কো প্রাইজ ফর স্কুল টেকস্টবুক (১৯৬১-১৯৬২), জাতীয় মৎস্য পাক্ষিক পুরস্কার (১৯৯৬), জাতীয় শিক্ষক দিবস স্বর্ণপদক (২০০৩), ড. এস.ডি. চৌধুরী স্বর্ণপদক (২০০৪) উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমীর ফেলো নির্বাচিত হন।
২৯শে আগস্ট, ২০২২ তারিখে ঢাকার গুলশানে তিনি ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।