মুজিবনগরের আম্রকানন: বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল স্থান। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল, মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে, মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের এই আম্রকাননে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে। এই ঐতিহাসিক ঘটনাই এই আম্রকাননকে বিশেষ তাৎপর্য দান করেছে।
প্রায় ৮০ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সের অন্যতম অংশ এই আম্রকানন। এখানে ১৩০০-এর বেশি আমগাছ ছিল, যদিও বয়স ও অবহেলার কারণে অনেক গাছই মারা গেছে। এই আম্রকাননের আয়তন প্রায় ৪০ একর। তিনটি ধাপে ছয় স্তর বিশিষ্ট দুইটি গোলাপ বাগান (৬ দফা আন্দোলনের প্রতীক) রয়েছে, যেখানে ২২০০ টি গোলাপ গাছ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বঙ্গবন্ধু তোরণ, অডিটোরিয়াম, শেখ হাসিনা মঞ্চ, মসজিদ, হেলিপ্যাড, মুজিব নগর স্মৃতি সৌধ (২৩টি কংক্রিটের ত্রিকোণ দেয়াল) এবং বাংলাদেশের মানচিত্র (মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর চিহ্নিত)। মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ভাস্কর্যও রয়েছে এখানে।
১৭ এপ্রিল ১৯৭১-এর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদসহ অন্যান্য মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। অধ্যাপক ইউসুফ আলী স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এই অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করেন মো. বাকের আলী।
আম্রকাননটি মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই স্থানটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চিরস্মরণীয় সাক্ষী, যা দেশের ইতিহাসে অনন্য গুরুত্ব বহন করে। এটি পর্যটন ও গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত। তবে, সময়ের সাথে সাথে আম্রকাননের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন যাতে এই ঐতিহাসিক স্থানের সৌন্দর্য ও গুরুত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে।