আমজাদ হোসেন: বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের এক অমূল্য সম্পদ
আমজাদ হোসেন (১৪ আগস্ট ১৯৪২ - ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮) ছিলেন বাংলাদেশের একজন অসাধারণ চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা, লেখক ও গীতিকার। তার সৃজনশীল জীবন ছিল বহুমুখী ও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি তিনি সাহিত্যেও অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার ১২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ৬টি বাচসাস পুরস্কার তার প্রতিভা ও জনপ্রিয়তার সাক্ষ্য বহন করে।
তার জন্ম ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির জামালপুর জেলায়। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির প্রতি তার আগ্রহ ছিল। ‘দেশ’ পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। পরে তিনি শিশুসাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্প ও উপন্যাস রচনা করেন। ১৯৬১ সালে ‘তোমার আমার’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রে পা রাখেন। পরবর্তীতে পরিচালক হিসেবে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ (১৯৬৭) ছবির মাধ্যমে তিনি নিজের পরিচালনার যাত্রা শুরু করেন।
আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমনি’ (১৯৭৬), ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ (১৯৭৮), ‘ভাত দে’ (১৯৮৪) চলচ্চিত্রগুলো বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। বিশেষ করে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ছবিটি দেশে-বিদেশে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে এবং ১০টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। এই ছবিতে তিনি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা ও গীতিকার – পাঁচটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে রেকর্ড গড়েন।
তিনি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)-এর সাথে যুক্ত ছিলেন। তার দুই পুত্র সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও সোহেল আরমানও চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে ইস্কেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। জামালপুরে তার সমাধিস্থ হয়।
আমজাদ হোসেন শুধুমাত্র একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একজন সৃজনশীল প্রতিভাবান ব্যক্তি যিনি চলচ্চিত্র ও সাহিত্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে গেছেন।