আবু ইউসুফ

বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ (১৯৩৭-১৯৯৯): একজন বীরের জীবনকাহিনী

আবু ইউসুফ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন অসাধারণ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার সাহসিকতা ও নেতৃত্বগুণের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার কাজলা গ্রামে ১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণকারী আবু ইউসুফের বাবার নাম মহিউদ্দিন তালুকদার এবং মায়ের নাম আশরাফুননেছা। তিনি পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রকৌশল শাখায় কর্মরত ছিলেন এবং ১৯৭১ সালে সৌদি আরবে প্রেষণে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে লন্ডন এবং পরে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

আবু ইউসুফ প্রথমে ছয় নম্বর সেক্টরে এবং পরে এগারো নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। জামালপুরের কামালপুর (১৪-১৫ ও ২৭-২৮ নভেম্বর), বকশিগঞ্জ ও জামালপুর যুদ্ধসহ বেশ কিছু যুদ্ধে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। কামালপুর মুক্ত করার পর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর জামালপুর অভিযানে তিনি মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার ক্লেয়ার ও কর্নেল ব্রারের সাথে হেলিকপ্টারে করে অবস্থানে এসে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে নেতৃত্ব দেন।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর কালিয়াকৈর-টাঙ্গাইলের মৌচাকে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি মুক্তিবাহিনীর একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এই সময় তিনি ব্রিগেডিয়ার আবদুল কাদের খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দলকে মৌচাকের ঠেঙ্গার বান্দ্রের কাছে অবস্থানকালে বন্দী করেছিলেন। এটি ছিল এক অসাধারণ সাহসিকতার পরিচয়। আবু ইউসুফের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদেরকে অস্ত্র সমর্পণ করতে বাধ্য করেছিল এবং ব্রিগেডিয়ার আবদুল কাদের খানকেও বন্দী করেছিলেন।

আবু ইউসুফের বীরত্বপূর্ণ কাজ স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে। তিনি ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক, সাহসী ও দক্ষ নেতা। আবু তাহের বীর উত্তম তার ভাই। তারা চার ভাই খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। আবু ইউসুফের স্ত্রীর নাম ফাতেমা ইউসুফ এবং তার এক ছেলে রয়েছে। তার মৃত্যু হয় ৩ জুলাই, ১৯৯৯ সালে। আবু ইউসুফের জীবন ও কাজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে সর্বদা স্মরণীয় থাকবে।

মূল তথ্যাবলী:

  • আবু ইউসুফ ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা
  • তিনি বীর বিক্রম খেতাব লাভ করেছেন
  • তার জন্ম নেত্রকোণায় এবং মৃত্যু ১৯৯৯ সালে
  • পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি বড় দলকে তিনি বন্দী করেছিলেন
  • আবু তাহের বীর উত্তম তার ভাই