মহান মুক্তিযুদ্ধের এক অমর শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. মোহাম্মদ আবুল খায়েরের জীবনী ও কর্মজীবন
ড. মোহাম্মদ আবুল খায়ের (১ এপ্রিল, ১৯২৯ - ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১) একজন বিশিষ্ট ঐতিহাসিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন শহীদ বুদ্ধিজীবী। তিনি ১৯২৯ সালের ১ এপ্রিল পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার কাঠালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবদুর রশীদ এবং মাতার নাম সৈয়দা ফখরুন্নেছা।
আবুল খায়ের ১৯৪৫ সালে পিরোজপুর সরকারি স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে আইএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৫০ সালে ইতিহাসে অনার্স এবং ১৯৫১ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে ইতিহাসে এমএ এবং ১৯৬২ সালে আমেরিকান ইতিহাসে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
তার শিক্ষকতা জীবন শুরু হয় বরিশালের চাখার ফজলুল হক কলেজে। ১৯৫৩-৫৪ সাল পর্যন্ত এই কলেজে শিক্ষকতা করার পর তিনি ঢাকার জগন্নাথ কলেজে যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে সহযোগী অধ্যাপক পদে উন্নীত হন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আবুল খায়ের সক্রিয়ভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীর সদস্যরা তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকা ফুলার রোডের ৩৫/বি নম্বর বাসা থেকে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে মিরপুর বধ্যভূমিতে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
ড. আবুল খায়েরের স্ত্রীর নাম সাইয়দা বেগম এবং তিন ছেলে ও এক মেয়ে। তার ছেলেদের নাম রিয়াজুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম ও রাশেদুল ইসলাম এবং মেয়ের নাম হোমায়রা ইয়াসমীন। তার জীবন ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তার মতো বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি বহন করে বাংলাদেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।