আবুল কাসেম ফজলুল হক: একজন অনন্য প্রাবন্ধিক, লেখক ও চিন্তাবিদ
বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, লেখক, গবেষক, ঐতিহাসিক, অনুবাদক, সমাজবিশ্লেষক, সাহিত্য সমালোচক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ হিসেবে আবুল কাসেম ফজলুল হক সুপরিচিত। ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৪০ সালে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় জন্মগ্রহণকারী এই ব্যক্তিত্ব রাষ্ট্রভাষা বাংলা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি নিরপেক্ষ রাজনৈতিক চিন্তা ও তত্ত্বের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তার রচনাবলীতে স্বদেশ ভাবনা ও রাজনৈতিক চিন্তার প্রভাব স্পষ্ট।
শিক্ষাজীবন:
১৯৫৯ সালে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯৬১ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিজ্ঞানে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৬৬ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনে মুনির চৌধুরী, আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ, নীলিমা ইব্রাহিম প্রমুখের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি প্রগতিশীল ভাবধারায় নিজেকে যুক্ত করেন।
কর্মজীবন ও অবদান:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে চার দশক শিক্ষকতা করেছেন ফজলুল হক। তিনি জনগণের মধ্যে সৎ চিন্তার জাগরণ ঘটাতে এবং শুভবোধের বিকাশে অবদান রেখেছেন। 'চার্বাক মতাবলম্বী' লোকায়ত নামক একটি মননশীল পত্রিকার সম্পাদনাও তিনি দীর্ঘদিন করেছেন। একুশের অধিক গ্রন্থ রচনা করার পাশাপাশি তিনি নজরুল রচনাবলীর সম্পাদনা পরিষদের সদস্যও ছিলেন। ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত স্বদেশ চিন্তা সংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
ব্যক্তিগত জীবন:
তার পিতার নাম মুহাম্মদ আবদুল হাকিম এবং মাতার নাম জাহানারা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম ফরিদা প্রধান। দুই সন্তানের একজন মেয়ে শুচিতা শরমিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ছেলে ফয়সল আরেফিন দীপন ছিলেন জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী। দুঃখজনকভাবে দীপন ২০১৫ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
সম্মাননা:
১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর তাকে বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
আবুল কাসেম ফজলুল হক বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সমাজের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তার লেখা ও কাজ বাংলা সাহিত্য ও চিন্তাধারায় গভীর প্রভাব ফেলেছে।