আবদুর রহিম: একজন যুক্তিবাদী চিন্তাবিদ ও অনুবাদক
আবদুর রহিম (আনু. ১৭৮৫-১৮৫৩) একজন বিশিষ্ট যুক্তিবাদী চিন্তাবিদ ও অনুবাদক ছিলেন, যিনি উত্তর ভারতের গোরক্ষপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় তাঁতি হলেও, তাঁর পিতার ফারসি ভাষার প্রতি অনুরাগের প্রভাবে তিনি আরবি ও ফারসি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। বাল্যকালে ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে বাম হাতে আঘাত পাওয়ার পর তিনি পারিবারিক পেশা ছেড়ে শিক্ষা অর্জনে মনোনিবেশ করেন।
তান্ডায় তিন বছর আধ্যাত্মিক শিক্ষা লাভের পর, ১৮০৪ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য লক্ষ্ণৌ যান। লক্ষ্ণৌর বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশ তাঁর চিন্তাভাবনায় গভীর প্রভাব ফেলে। সেখানে শিয়া-সুন্নি সংঘাত দেখে তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামির প্রতি বিমুখ হন। পরে দিল্লীতে শাহ আবদুল আজিজ ও মোল্লা রফিউদ্দীনের কাছে ইসলামী গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন। দিল্লীতেই তিনি দর্শনশাস্ত্র ও বিজ্ঞানের আরবি ও ফারসি গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন এবং প্রাচ্য চিকিৎসায়ও কিছুটা দক্ষতা অর্জন করেন।
ধর্মীয় গ্রন্থ ও দর্শনের গবেষণা তাঁকে ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে মুক্ত করে যুক্তিবাদী ও মুক্তচিন্তাবিদে পরিণত করে। তিনি ‘দাহরি’ উপাধি পান। তাঁর মতে, ঈশ্বরের ধারণা ইমামদের উদ্ভাবন, এবং সূর্য সৃষ্টির উৎস। ১৮১০ সালে কলকাতায় আসেন এবং বাকি জীবন সেখানেই কাটান। কলকাতার বহুজাতিক পরিবেশ তাঁকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করায়।
কলকাতায় ইংরেজি শিখে, জনশিক্ষা কমিটির জন্য ইংরেজি গ্রন্থ আরবি ও ফারসিতে অনুবাদ করেন। টালিগঞ্জে টিপু সুলতানের পুত্রের গৃহে অবস্থানকালে কবি ও সাহিত্যিকদের সঙ্গে মেলামেশা করেন এবং বিদ্বৎসমাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। ওবায়দুল্লাহ্-এল ওবায়দি ছিলেন তাঁর অন্যতম প্রিয় ছাত্র। ১৮১০ সালে ওবায়দির সাথে যৌথভাবে ’মাশরিকুল আনোয়ার’ অনুবাদ করেন। ঢাকায় তাঁর আত্মজীবনী সংরক্ষিত আছে। তাঁর অন্যান্য প্রকাশনা, অনুবাদ ও লেখাও বিখ্যাত। ১৮৫৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আবদুর রহিম শুধু একজন যুক্তিবাদী চিন্তাবিদই ছিলেন না, বরং একজন দক্ষ অনুবাদক ও শিক্ষকও ছিলেন যিনি তাঁর জীবনে বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে গেছেন।