আফ্রিকা

আফ্রিকা: বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ

আফ্রিকা আয়তন ও জনসংখ্যা উভয় দিক থেকে এশিয়ার পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ। পার্শ্ববর্তী দ্বীপপুঞ্জসহ এর আয়তন প্রায় ৩০৩ লক্ষ বর্গকিলোমিটার (১১৭ লক্ষ বর্গমাইল), যা বিশ্বের মোট ভূপৃষ্ঠের ৬% এবং স্থলভাগের ২০.৪%। ২০২১ সালের হিসেবে এখানে প্রায় ১৪০ কোটি মানুষ বাস করে, যা বিশ্বজনসংখ্যার প্রায় ১৮%। আফ্রিকার জনসংখ্যা বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী জনসংখ্যা। নাইজেরিয়া আফ্রিকার জনবহুলতম দেশ। মহাদেশটির মধ্য দিয়ে নিরক্ষরেখা অতিক্রম করেছে।

ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈচিত্র্য:

আফ্রিকার উত্তরে ভূমধ্যসাগর, উত্তর-পূর্বে সুয়েজ খাল ও লোহিত সাগর, পূর্বে ভারত মহাসাগর এবং পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর। উত্তর-পূর্বে সিনাই উপদ্বীপের মাধ্যমে এশিয়ার সাথে সংযুক্ত। এখানে ঘন সবুজ বনানী, বিশাল তৃণভূমি, জনমানবহীন মরুভূমি, উঁচু পর্বত এবং বহু খরস্রোতা নদী রয়েছে। শত শত ভাষাভাষী বিভিন্ন জাতির মানুষের বসবাস। গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও বড় বড় শহরগুলোতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে।

নামকরণের ইতিহাস:

আফ্রিকা নামটি ল্যাটিন শব্দ, যার ব্যবহার হত উত্তর আফ্রিকার (নীল নদীর পশ্চিমে) অধিবাসীদের বুঝাতে। এর উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মত আছে; কিছু মতে ফিনিশিয়ান শব্দ 'আফার' (ধুলো) থেকে, আবার কিছু মতে বারবার শব্দ 'ইফ্রি' (গুহা) থেকে উৎপত্তি।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলী:

আফ্রিকা মানব সভ্যতার আদি নিবাস। প্রায় ৫০০০ বছর আগে উত্তর-পূর্ব আফ্রিকায় বিশ্বের প্রথম মহান সভ্যতা মিশর সভ্যতার উত্থান ঘটে। পরবর্তীতে অনেক সংস্কৃতি ও রাজ্যের উত্থান ও পতন ঘটেছে। ৫০০ বছর আগেও আফ্রিকা জুড়ে ছিল সমৃদ্ধ নগর, বাজার ও শিক্ষাকেন্দ্র। কিন্তু পরবর্তীতে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের আগমনের সাথে দাস ব্যবসা শুরু হয় এবং আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট শুরু হয়। ১৯শ শতকের শেষভাগে প্রায় পুরো আফ্রিকা ইউরোপীয় উপনিবেশে পরিণত হয়। ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।

ধর্ম:

আফ্রিকায় ইসলাম, খ্রিস্টান এবং আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী ধর্মের অনুসারীরা রয়েছে।

অর্থনীতি:

আফ্রিকায় প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও এটি বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র মহাদেশ। ঔপনিবেশিক শাসন, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং যুদ্ধ এর প্রধান কারণ। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফ্রিকার অর্থনীতিতে কিছুটা উন্নয়ন হয়েছে।

আফ্রিকান ইউনিয়ন:

আফ্রিকার ৫৫টি স্বাধীন রাষ্ট্র আফ্রিকান ইউনিয়নের অধীনে কাজ করে। এটির সদর দপ্তর ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় অবস্থিত।

সংস্কৃতি:

আফ্রিকার সংস্কৃতি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। এখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব ঐতিহ্য, ভাষা এবং রীতিনীতি রয়েছে। আফ্রিকান কলা ও সংগীত বিশ্বজুড়ে পরিচিত।

উল্লেখ্যযোগ্য স্থান:

জোহেন্সবার্গ, নাইরোবি, আবিদজান।

মূল তথ্যাবলী:

  • আফ্রিকা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ
  • এশিয়ার পরেই আফ্রিকার জনসংখ্যা দ্বিতীয়
  • নাইজেরিয়া আফ্রিকার জনবহুলতম দেশ
  • আফ্রিকার বৈচিত্র্যময় ভৌগোলিক অবস্থান
  • দীর্ঘ ও জটিল ঐতিহাসিক পটভূমি
  • ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাব
  • স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতা
  • অর্থনৈতিক উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ
  • আফ্রিকান ইউনিয়নের ভূমিকা
  • বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি