আতাউর রহমান: বাংলাদেশের মঞ্চ ও টেলিভিশন অভিনয়ের এক অমূল্য সম্পদ
আতাউর রহমান (জন্ম: ১৮ জুন, ১৯৪১) একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী মঞ্চ ও টেলিভিশন অভিনেতা, মঞ্চ নির্দেশক এবং লেখক। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধোত্তর মঞ্চনাটক আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত এবং বাংলাদেশী নাট্যজগতের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। মঞ্চনাটকে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি ২০০১ সালে একুশে পদক এবং ২০২১ সালে সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পুরষ্কারে ভূষিত হন।
তার জন্ম ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) নোয়াখালী জেলায়। শৈশব কাটে নোয়াখালীর মামার বাড়িতে। এই সময় তিনি জুল ভার্ন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যের সাথে পরিচিত হন। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে শিক্ষা গ্রহণের পর, তিনি ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা শেষ করে, জিয়া হায়দারের প্রেরণায় তিনি মঞ্চনাটকে জড়িত হন। ১৯৬৮ সালে তিনি ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়’-এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’ নাটকের মাধ্যমে নির্দেশনায় তার যাত্রা শুরু হয়। পরে, বাদল সরকার রচিত ‘বাকি ইতিহাস’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি দর্শকদের হৃদয়ে স্থান করে নেন।
আতাউর রহমান ৩৫টির অধিক মৌলিক এবং অনুবাদিত মঞ্চনাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন। ‘গ্যালিলিও’, ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘রক্তকরবী’, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’, ‘নারীগণ’, ‘ঈর্ষা’, ‘অপেক্ষমাণ’, এবং ‘ওয়েটিং ফর গোডো’ তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে অন্যতম। তিনি বাংলাদেশ সেন্টার অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতি ছিলেন। তার নেতৃত্বে ২০১১ সালে ১০ দিন ব্যাপী প্রথম ঢাকা আন্তর্জাতিক থিয়েটার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনেরও প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন।
মঞ্চের পাশাপাশি আতাউর রহমান কবিতাও রচনা করেন। ‘স্বপ্নের পাহাড়’, ‘রাতদিন’, ‘ভালো আছি’ তার কিছু উল্লেখযোগ্য কবিতা। ১৭ই আগস্ট ২০১৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তার এক পুত্র এবং এক কন্যা রয়েছে। ‘ওয়েটিং ফর গোডো’ এবং ‘জোরবা দ্য গ্রিক’ তার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। তিনি একজন রবীন্দ্র সংগীতের প্রখর অনুরাগী।