অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ৩:৩৯ এএম

জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান: বাংলাদেশের এক অমূল্য সম্পদ

জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান (১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭ - ১৪ মে ২০২০) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক। তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অতুলনীয় অবদানের জন্য সর্বজন সমাদৃত ছিলেন। তার জীবনকাল ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়ের সাক্ষী, যেখানে তিনি ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার অংশীদার ছিলেন।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:

ড. আনিসুজ্জামানের জন্ম হয় ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে। তার পিতা এটিএম মোয়াজ্জেম ছিলেন একজন বিখ্যাত হোমিও চিকিৎসক এবং মা সৈয়দা খাতুন গৃহিনী ছিলেন। শিক্ষাজীবন শুরু করেন কলকাতার পার্ক সার্কাস হাইস্কুলে। দেশভাগের পর তাঁর পরিবার খুলনা এবং পরে ঢাকায় চলে আসে। তিনি ১৯৫১ সালে প্রিয়নাথ হাইস্কুল (বর্তমান নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) থেকে ম্যাট্রিক ও ১৯৫৩ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।

শিক্ষা ও কর্মজীবন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক এবং ১৯৫৭ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন। তার পিএইচডি থিসিস ছিল “ইংরেজ আমলের বাংলা সাহিত্যে বাঙালি মুসলমানের চিন্তাধারা: ১৭৫৭-১৯১৮”। ১৯৬৫ সালে তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “উনিশ শতকে বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস: ইয়ং বেঙ্গল ও সমকাল” বিষয়ে পোস্ট-ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং ১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। ২০০৩ সালে অবসর নেওয়ার পরও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক এবং পরে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন।

রাজনৈতিক ও সামাজিক অংশগ্রহণ:

ড. আনিসুজ্জামান ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে গিয়ে শরণার্থী শিক্ষকদের সংগঠন 'বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি'র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭২ সালে কুদরাত-এ-খুদা কমিশনের সদস্য ছিলেন এবং বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের বাংলা ভাষান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

সাহিত্য ও গবেষণা:

ড. আনিসুজ্জামানের সাহিত্য ও গবেষণা কাজ অসাধারণ। তিনি বহু গবেষণা গ্রন্থ, প্রবন্ধ ও নিবন্ধ রচনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে “মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য”, “আমার একাত্তর”, “কাল নিরবধি” (আত্মজীবনী) উল্লেখযোগ্য। তিনি শিল্পকলাবিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা “যামিনী” এবং বাংলা মাসিকপত্র “কালি ও কলম” এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

সম্মাননা ও পুরষ্কার:

তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ড. আনিসুজ্জামান বহু পুরস্কারে ভূষিত হন। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭০), একুশে পদক (১৯৮৫), পদ্মভূষণ (২০১৪) এবং স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৫) উল্লেখযোগ্য। ২০১৮ সালে তাকে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় অধ্যাপক উপাধিতে ভূষিত করে।

মৃত্যু:

ড. আনিসুজ্জামান ২০২০ সালের ১৪ মে ঢাকার একটি সামরিক হাসপাতালে ৮৩ বছর বয়সে মারা যান। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন অসাধারণ শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষককে হারিয়েছে।

আনিসুজ্জামান: একজন শিক্ষাবিদ, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপকের জীবনী

জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৩৭ সালে জন্ম, পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাটে
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক
  • ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ
  • বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, পদ্মভূষণ, স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত
  • ২০২০ সালে মৃত্যু

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।