অজিত রায়

আপডেট: ৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২:২৪ এএম

অজিত রায়: স্বাধীনতার সুরকার, মুক্তিযুদ্ধের কন্ঠ

বাংলাদেশের সংগীত জগতের এক অমূল্য সম্পদ ছিলেন অজিত রায়। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার এবং সঙ্গীত পরিচালক। তার সঙ্গীত জীবন ছিল দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ, যার সাথে জড়িত রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রা।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন: ১৯৩৮ সালের ২৯শে জুন কুড়িগ্রাম জেলার সোনালুর কুঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন অজিত রায়। তার মাতা কনিকা রায় ছিলেন একজন সংগীতশিল্পী ও শিক্ষিকা, যিনি ছোটবেলা থেকেই তাকে সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহী করে তোলেন। ১৯৫৭ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কৈশোরে তবলা বাজানো শেখেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন তার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে এবং তিনি সঙ্গীতকে জাতীয়তাবোধের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন।

সংগীত জীবন: ১৯৬৩ সাল থেকে তিনি ঢাকা বেতারে গান গাওয়া শুরু করেন। পরবর্তীতে টেলিভিশনেও তার গানের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের স্মরণে নতুন গান তৈরি করতেন। এছাড়াও, তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, দেশাত্মবোধক গান ও গণসংগীত পরিবেশন করতেন। অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্রের পটভূমি সংগীত ও গানেও তার অবদান রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অজিত রায় কলকাতায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন। তার রচিত ও গাওয়া গানগুলো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জোগায়। বিজয় দিবসে প্রচারিত আখতার হোসেন রচিত ‘স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে আজ’ গানটিতে তার সুর ও কণ্ঠ ছিল।

পরবর্তী জীবন ও মৃত্যু: ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ বেতারে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। ২০১১ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

অজিত রায়ের স্মৃতি: অজিত রায়ের সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত হয় বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংগ্রামের ছবি। তার সৃজনশীলতা এবং দেশপ্রেম সর্বদা আমাদের স্মরণে থাকবে।

মূল তথ্যাবলী:

  • অজিত রায় ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার ও গীতিকার।
  • তিনি ১৯৩৮ সালে কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০১১ সালে মারা যান।
  • মুক্তিযুদ্ধে তার লেখা ও গাওয়া গান মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিল।
  • তিনি ২০০০ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন।
  • তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে আজ’।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।