হেমন্ত মুখার্জী

আপডেট: ৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১:৫৭ এএম

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়: বাংলা গানের অমর সম্রাট

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (১৬ জুন ১৯২০ - ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯) বাংলা গানের ইতিহাসে এক অমর নাম। কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক এবং প্রযোজক - একাধারে তিনি ছিলেন একজন পুরোপুরি শিল্পী। শুধু বাংলা নয়, হিন্দি, মারাঠি, গুজরাটি, পাঞ্জাবি, অসমীয়া, সংস্কৃতসহ বহু ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। হিন্দি সঙ্গীত জগতে তাঁকে হেমন্ত কুমার নামেই বেশি পরিচিত।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:

বেনারসে মামার বাড়িতে জন্ম হলেও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগর তাঁর পৈতৃক নিবাস। ১৯২২ সালে তাঁর পরিবার কলকাতায় চলে আসে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কলকাতার নাসিরুদ্দিন স্কুল এবং মিত্র ইন্সটিটিউশনে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও, সঙ্গীতের প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে তিনি পড়াশোনা অসম্পূর্ণ রেখে সঙ্গীত জগতে আত্মনিয়োগ করেন।

সঙ্গীত জীবনের আবির্ভাব:

বন্ধু কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সাহায্যে ১৯৩৫ সালে আকাশবাণীতে প্রথম গান রেকর্ড করেন তিনি। 'আমার গানেতে এলে নবরূপী চিরন্তনী' গানটির প্রথম লাইন। ১৯৩৭ সালে 'গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া'র জন্য 'জানিতে যদি গো তুমি' এবং 'বলো গো বলো মোরে' গান রেকর্ড করেছিলেন। শৈলেশ দত্তগুপ্ত তাঁর প্রারম্ভিক সঙ্গীত জীবনে পরামর্শদাতা ছিলেন। তাঁর সঙ্গীতের কণ্ঠকে ‘ঈশ্বরের কণ্ঠ’ বলেও বিখ্যাত।

চলচ্চিত্র ও বেসিক রেকর্ড:

১৯৪১ সালে 'নিমাই সন্ন্যাস' চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান গান। ১৯৪৪ সালে 'ইরাদা' চলচ্চিত্রে প্রথম হিন্দি গান গান। 'প্রিয় বান্ধবী' ছবিতে তিনি প্রথম রবীন্দ্রসংগীত রেকর্ড করেন। তিনি প্রায় দুই হাজারের বেশি রবীন্দ্রসংগীত রেকর্ড করেছেন, বেসিক রেকর্ডসহ অনেক সিনেমায়। 'হারানো সুর' ছবিতে 'তুমি যে আমার' গানটির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন তিনি। উত্তম-হেমন্ত জুটির 'শাপমোচন', 'মরুতীর্থ হিংলাজ', 'সপ্তপদী', 'শেষ পর্যন্ত', 'হারানো সুর' ছবিতে অসাধারণ জনপ্রিয়তা পায়। হিন্দি সিনেমায়ও তাঁর গানের চাহিদা ছিল অপরিসীম। 'নাগিন' ছবির গান খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল।

সলিল চৌধুরীর সাথে যুগান্তকারী যাত্রা:

সঙ্গীত পরিচালক সলিল চৌধুরীর সাথে তাঁর জুটি অমিত জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ১৯৪৭ সালে 'গাঁয়ের বধূ' গানটি তাদের যাত্রা শুরু। 'রানার', 'পালকির গান' প্রভৃতি তাদের উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে অন্যতম।

প্রযোজক ও পরিচালক:

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় একজন সফল প্রযোজকও ছিলেন। স্ত্রী বেলা মুখোপাধ্যায়ের সাথে তিনি 'হেমন্ত-বেলা প্রোডাকশন্স' প্রতিষ্ঠা করেন। 'নীল আকাশের নীচে' তাদের প্রথম ছবি।

পুরস্কার ও সম্মাননা:

জীবদ্দশায় তিনি অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড, ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড, সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে অন্যতম। তবে ১৯৭০ সালে পদ্মশ্রী এবং ১৯৮৭ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কার তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

মৃত্যু:

১৯৮৯ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

উপসংহার:

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান, সুর এবং কণ্ঠ বাংলা সংগীত জগতে সর্বকালের স্মরণীয়। আজও তাঁর গান আমাদের মনে সঞ্চারী।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়: বাংলা গানের অমর সম্রাট

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, বাংলা গানের অমর সম্রাট, ১৬ জুন ১৯২০ বেনারসে জন্ম, কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, প্রযোজক, রবীন্দ্রসংগীতের অসাধারণ শিল্পী, অসংখ্য পুরস্কার, ১৯৮৯ সালে মৃত্যু।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, বেলা মুখোপাধ্যায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, উত্তম কুমার, সলিল চৌধুরী, লতা মঙ্গেশকর, শৈলেশ দত্তগুপ্ত, পঙ্কজ মল্লিক

বেনারস, জয়নগর, কলকাতা, মুম্বাই, ঢাকা

বাংলা গান, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সঙ্গীত, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী, রবীন্দ্রসংগীত, হিন্দি সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত পরিচালক, প্রযোজক

গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া, হেমন্ত-বেলা প্রোডাকশন্স, আইপিটিএ

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (গায়ক)

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯২০ সালে বেনারসে জন্ম
  • বাংলা ও হিন্দি গানের কিংবদন্তী
  • রবীন্দ্র সংগীতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী
  • অনেক চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক
  • সলিল চৌধুরীর সাথে অসাধারণ জুটি
  • অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ
  • ১৯৮৯ সালে মৃত্যু

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।