হিমালয়: বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতমালা
বিশ্বের ছাদ হিসেবে পরিচিত হিমালয় পর্বতমালা এশিয়ার একটি বিশাল পর্বতশ্রেণী, যা দক্ষিণ এশিয়ার সমভূমিকে তিব্বতীয় মালভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন করে। এই পর্বতমালায় পৃথিবীর কিছু সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, যেমন মাউন্ট এভারেস্ট (৮৮৪৮ মিটার), কেটু (৮৬১১ মিটার), কাঞ্চনজঙ্ঘা (৮৫৮৬ মিটার) অবস্থিত। ৭২০০ মিটারের (২৩৬০০ ফুট) বেশি উচ্চতার ১০০টিরও বেশি পর্বতশৃঙ্গ রয়েছে এই পর্বতমালায়। নেপাল, চীন, ভারত, পাকিস্তান এবং ভুটান এই পাঁচটি দেশের সীমানা হিমালয় ঘিরে রয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য:
ভারতীয় টেকটনিক প্লেটের ইউরেশীয় প্লেটের সাথে সংঘর্ষের ফলে হিমালয়ের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় 2400 কিলোমিটার (1500 মাইল) দীর্ঘ এই পর্বতমালা পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম থেকে পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বিস্তৃত। এর প্রস্থ পশ্চিমে ৩৫০ কিলোমিটার থেকে পূর্বে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত। হিমালয়ের নামকরণ সংস্কৃত শব্দ "হিমালয়" থেকে হয়েছে যার অর্থ "শীতের আবাস"।
সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব:
হিমালয় হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন সহ বিভিন্ন ধর্মের কাছে পবিত্র। অনেক পর্বতশৃঙ্গ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের স্থান। হিন্দু ধর্মে হিমালয়কে দেবতা হিমবৎ হিসেবে পূজা করা হয়। বৌদ্ধ ধর্মেও হিমালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে, যেমন পারো তক্তসাং।
জনসংখ্যা ও অর্থনীতি:
হিমালয়ের আশেপাশে প্রায় ৬০ কোটি মানুষ বাস করে, এর মধ্যে ৫ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ হিমালয়ে বাস করে। হিমালয়ের অর্থনীতি মূলত কৃষি, পশুপালন এবং পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। এছাড়াও, হিমালয়ের ঔষধি গাছপালা ও খনিজ সম্পদ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঐতিহাসিক ঘটনা:
১৯৫৩ সালে স্যার এডমন্ড হিলারী ও তেনজিং নরগের মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণ হিমালয়ের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
পরিবেশগত গুরুত্ব:
হিমালয় পৃথিবীর বহু গুরুত্বপূর্ণ নদীর উৎস। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধুসহ অনেক নদীর জন্মস্থান হিমালয়। এই নদীগুলো দক্ষিণ এশিয়ার জলের প্রধান উৎস। তবে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হিমবাহ গলে যাওয়ার ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে হিমালয়।
উপসংহার:
হিমালয় পর্বতমালা শুধু ভূ-তাত্ত্বিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়; এর সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত গুরুত্ব অপরিসীম। এই পর্বতমালা বিশ্বের ঐতিহ্যের অমূল্য অংশ এবং এর সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরী।