সের্গেই এসিয়েনিন: বিংশ শতাব্দীর এক রাশিয়ান কবি
সের্গেই আলেক্সান্দ্রোভিচ এসিয়েনিন (রুশ: Сергей Александрович Есенин; আইপিএ: [sʲɪrˈɡʲej ɐlʲɪkˈsandrəvʲɪtɕ jɪˈsʲenʲɪn]; ৩ অক্টোবর [ও.এস. ২১ সেপ্টেম্বর] ১৮৯৫ - ২৮ ডিসেম্বর ১৯২৫) বিংশ শতাব্দীর একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুপরিচিত রুশ গীতিকবি ছিলেন। তিনি গ্রামীণ জীবনের স্মৃতি ও আবেগকে কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছেন, যা শহুরে জীবন ও শিল্পায়নের বিরোধিতা করে।
এসিয়েনিনের জন্ম রাশিয়ান সাম্রাজ্যের রিয়াজান গভর্নরেটের রিয়াজান কাউন্টির কনস্টান্টিনভো গ্রামে (বর্তমান রিবনভস্কি জেলা, রিয়াজান অবলাস্ট) কৃষক পরিবারে। তার বাবা আলেক্সান্ডার নিকিতিচ এসিয়েনিন (১৮৭৩-১৯৩১) এবং মা তাতিয়ানা ফিওডোরোভনা এসেনিনা (née তিতোভা), (১৮৭৫-১৯৫৫)।
তার বাবা-মা দুজনেই কাজের সন্ধানে বাইরে থাকতেন, বাবা মস্কোতে এবং মা রিয়াজানে। দুই বছর বয়সে সের্গেইকে নিয়ে তার মাতামহ-মাতামহী ফিওডর আলেক্সিভিচ তিতোভ এবং নাটালিয়া ইয়েভতিখিভনা তিতোভা-র কাছে মাতোভো গ্রামে পাঠানো হয়। তার মাতামহ-মাতামহী তাকে লালন-পালন করেন।
তিতোভ পরিবারের তিনজন প্রাপ্তবয়ষ্ক পুত্র ছিল এবং তারা ছিল এসিয়েনিনের শৈশবের সঙ্গী। পাঁচ বছর বয়সে পড়াশোনা শুরু করেন এবং নয় বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন, যা প্রাথমিকভাবে চাস্তুশকাস ও লোককাহিনীর দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। তার দুই ছোট বোন ছিল, একাটেরিনা (১৯০৫-১৯৭৭) এবং আলেক্সান্দ্রা (১৯১১-১৯৮১)।
১৯০৪ সালে তিনি কনস্টান্টিনভো জেমস্টো স্কুলে ভর্তি হন। ১৯০৯ সালে স্কুল থেকে সম্মানসূচক সনদ নিয়ে স্থানীয় মাধ্যমিক পারোচিয়াল স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯১০ সাল থেকে কবিতা নিয়মিত লিখতে শুরু করেন। ১৯১২ সালে রিয়াজানে ‘বোলনে দুমি’(মুক্ত চিন্তা) নামে তার প্রথম বই প্রকাশের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন।
১৯১২ সালে শিক্ষক ডিপ্লোমা নিয়ে মস্কোতে চলে আসেন এবং সিটিনের প্রিন্টিং কোম্পানিতে প্রুফরিডারের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। পরের বছর শানিয়ভস্কি মস্কো সিটি পিপলস ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস ও দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন, কিন্তু অর্থের অভাবে ছয় মাস পরে ছেড়ে দিতে হয়। মস্কোতে কয়েকজন আকাঙ্ক্ষী কবির সাথে বন্ধুত্ব করেন, যাদের মধ্যে দিমিত্রি সেমিয়নভস্কি, ভ্যাসিলি নাসেডকিন, নিকোলাই কোলোকোলভ এবং ইভান ফিলিপচেনকো উল্লেখযোগ্য।
১৯১৩ সালে আন্না ইজ্রিয়াডনোভা নামক প্রকাশনা সংস্থার এক সহকর্মীর সাথে তিন বছর স্থায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার এই সংসারে এক পুত্র সন্তান, ইুরি হয়। ১৯১৩ সালেই খ্রিস্টধর্মে আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। সে বছরই তিনি মস্কোর বিপ্লবী মহলে জড়িত হন।
জানুয়ারী ১৯১৪ সালে শিশুদের পত্রিকা মিরোকে(ছোটো পৃথিবী) প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতা ‘বেরিওজা’(বার্চ ট্রি)। ১৯১৫ সালে মস্কোর উদাসীনতায় হতাশ হয়ে পেট্রোগ্রাডে চলে যান। ৮ মার্চ পেট্রোগ্রাডে পৌঁছে পরের দিন আলেক্সান্ডার ব্লকের সাথে দেখা করেন। সেখানে তিনি সের্গেই গোরোডেটস্কি, নিকোলাই ক্লুয়েভ এবং আন্দ্রেই বেলির সাথে পরিচিত হন। ব্লক বিশেষ করে এসিয়েনিনের প্রথমদিকের সাহিত্যিক ক্যারিয়ারের প্রচারে সহায়তা করেন।
সে বছরই তিনি ক্রাসা (সৌন্দর্য) গোষ্ঠীর সাথে যোগদান করেন যাতে অন্যান্যদের মধ্যে ক্লুয়েভ, গোরোডেটস্কি, সের্গেই ক্লিচকভ এবং আলেক্সান্ডার শিরিয়ভেটস ছিলেন। ১৯১৬ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। জুলাই ১৯১৬ সালে রাণী অ্যালেক্সান্ড্রা ফিওডোরোভনার উপস্থিতিতে তার কবিতা আবৃত্তি করেন।
১৯১৭ সালে ফেব্রুয়ারী বিপ্লবের সমর্থন করেন। অক্টোবর বিপ্লবের পরেও সমর্থন করেন। পরবর্তীতে বোলশেভিক শাসনের সমালোচনা করেন। ১৯১৭-১৯১৮ সালে তিনি ‘প্রিসহেস্টভিয়ে’ (আগমন), ‘প্রিওব্রাজেনিয়ি’ (রূপান্তর) এবং ‘ইনোনিয়া’ কবিতা লিখেছিলেন।
সেপ্টেম্বর ১৯১৮ সালে এসিয়েনিন আন্দ্রেই বেলি, পিওটর ওরেশিন, লেভ পভিটস্কি এবং সের্গেই ক্লিচকভের সাথে মিলিত হয়ে ‘ট্রুডোভায়া আরটেল হুদোঝনিকভ স্লোভা’ (শব্দের শিল্পীদের লেবার আর্টেল) প্রকাশনা সংস্থা স্থাপন করেন।
সেপ্টেম্বর ১৯১৮ সালে আনাতোলি মারিয়েনহফের সাথে বন্ধুত্ব করেন এবং ইমেজিনিস্ট সাহিত্য আন্দোলনের স্থাপনা করেন। জানুয়ারী ১৯১৯ সালে ইমেজিনিস্ট ম্যানিফেস্টো স্বাক্ষর করেন।
জুলাই-আগস্ট ১৯২০ সালে রাশিয়ার দক্ষিণে সফর করেন। নভেম্বর ১৯২০ সালে গালিনা বেনিসলাভস্কায়ার সাথে দেখা করেন। ওই বছরই তার তিনটি বই প্রকাশের অনুমতি দেয়া হয় নি।
মে ১৯২১ সালে তাসখন্দে বন্ধু কবি আলেক্সান্ডার শিরিয়ভেটসের কাছে যান। ১৯২১ সালের শেষের দিকে চিত্রশিল্পী জর্জি ইয়াকুলভের স্টুডিওতে প্যারিসভাসী আমেরিকান নৃত্যশিল্পী আইসোডোরা ডানকানের সাথে দেখা করেন এবং ২ মে ১৯২২ সালে বিয়ে করেন।
১৯২২ সালে তার আত্মজীবনীতে লেখেন, ‘রাশিয়ার সাম্প্রতিক স্থানান্তরিত অতীত আমাকে আকর্ষণ করে না এবং আমি সভ্যতার পক্ষে। কিন্তু আমি আমেরিকাকে অত্যন্ত ঘৃণা করি।’
১৯২৩ সালে অভিনেত্রী অগাস্টা মিক্লাশেভস্কায়ার সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। ওই বছর কবি নাডেজদা ভলপিনার সাথে তার এক পুত্র সন্তান হয়।
এসিয়েনিনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকলে তার মদ্যপান এবং জনসম্মুখে উত্তেজনাপূর্ণ আচরণের গল্প ছড়িয়ে পড়ে। ১৯২৩ সালের শরৎকালে তাকে মস্কোতে দুইবার গ্রেফতার করা হয়।
জানুয়ারী-এপ্রিল ১৯২৪ সালে চারবার গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ১৯২৪ সালে আজারবাইজান সফর করেন।
১৯২৫ সালের গোড়ার দিকে লিও টলস্টয়ের নাতনী কাউন্টেস সোফিয়া আন্দ্রিভনা টলস্টয়ার সাথে বিয়ে করেন। মে মাসে তার শেষ বড় কবিতা ‘অ্যানা স্নেগিনা’ প্রকাশিত হয়।
২৮ ডিসেম্বর ১৯২৫ সালে ৩০ বছর বয়সে লেংগ্রাডের হোটেল অ্যাংলেটারে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, কেউ কেউ আত্মহত্যা বলে মনে করলেও অন্যদের মতে এটি একটি ষড়যন্ত্র।
লেংগ্রাডে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে তার মরদেহ মস্কোতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ৩১ ডিসেম্বর ১৯২৫ সালে মস্কোর ভাগানকোভস্কোয়ে কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।