ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলা: একটি সমন্বিত বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হল সালথা ও নগরকান্দা। ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, অর্থনীতি, ঐতিহাসিক ঘটনা এবং সম্প্রতি মাটি কাটা সংক্রান্ত সমস্যা - এই নিবন্ধে আমরা এই দুটি উপজেলার বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করব।
ভৌগোলিক অবস্থান ও সীমানা:
সালথা উপজেলার আয়তন প্রায় ১৮৬.২০ বর্গ কিমি। এটি ২৩°১৮´ থেকে ২৩°৩০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪৩´ থেকে ৮৯°৫৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। উত্তরে ফরিদপুর সদর, দক্ষিণে মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী উপজেলা, পূর্বে নগরকান্দা, এবং পশ্চিমে বোয়ালমারী উপজেলা এর সীমানা। কুমার ও পুরাতন কুমার নদী এবং ঘুলিল বিল, কাগদির বিল এর উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
নগরকান্দা উপজেলার আয়তন প্রায় ১৯২.২০ বর্গ কিমি। এটি ২৩°১৯´ থেকে ২৩°২৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪৩´ থেকে ৮৯°৫৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। উত্তরে ফরিদপুর সদর ও চরভদ্রাসন, দক্ষিণে মুকসুদপুর, পূর্বে ভাঙ্গা ও সদরপুর, এবং পশ্চিমে সালথা উপজেলা এর সীমানা। ভূবনেশ্বর ও শীতলক্ষ্যা নদী এবং জালিবাড়ী খাল এর উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
জনসংখ্যা ও জনসংখ্যাগত বৈশিষ্ট্য:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সালথার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৬৭,৪৪৬ জন (পুরুষ ৮৩,০৯৮, মহিলা ৮৪,৩৪৮)। নগরকান্দার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৯৭,৮৯৮ জন (পুরুষ ৯৮,২৯০, মহিলা ৯৯,৬০৮)।
অর্থনীতি ও কৃষি:
সালথা উপজেলা পাট ও পিঁয়াজ উৎপাদনের জন্য পরিচিত। খেজুরের রস ও গুড় উৎপাদনও গুরুত্বপূর্ণ। নগরকান্দা উপজেলা সোনালী আশ পাট ও পিঁয়াজের জন্য বিখ্যাত।
ঐতিহাসিক ঘটনা ও মুক্তিযুদ্ধ:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সালথার চান্দের হাটে এবং নগরকান্দায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। নগরকান্দায় মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল, যেমন নগরকান্দা পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ, চর যশোহরদি গণহত্যা, এবং কোদালিয়ায় গণকবর।
সম্প্রতি মাটি কাটা সংক্রান্ত সমস্যা:
গত একযুগে, ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার বেশিরভাগ খাল-বিল, নদী-নালা এবং হাজারো বিঘা পতিত জমির মাটি অপরিকল্পিতভাবে কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এই অবৈধ মাটি কাটা কার্যকলাপ ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে এবং ভূমি ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এতে দুটি উপজেলার পরিবেশ ও অর্থনীতির উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
উপসংহার:
সালথা ও নগরকান্দা উপজেলা ফরিদপুর জেলার অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অবৈধ মাটি কাটা রোধ এবং স্থায়ী উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য সরকার ও স্থানীয় জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি।