শামসুদ্দীন মোল্লা: একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সংবিধান রচয়িতা
শামসুদ্দীন মোল্লা ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তিনি ১৯২১ সালের ২০ এপ্রিল ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার পূর্ব সদরদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪১ সালে ভাঙ্গার পাইলট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৪৪ সালে কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৬ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমান মৌলানা আজাদ কলেজ) থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। উল্লেখ্য, এই কলেজে তাঁর সহপাঠী ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
শামসুদ্দীন মোল্লা কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়াকালীন সময়ে নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের সান্নিধ্যে আসেন। তিনি বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন, যেমন সহ-সভাপতি (১৯৫৫-১৯৫৮) এবং সাধারণ সম্পাদক (১৯৬০-১৯৭১)। তিনি পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতির সভাপতি (১৯৬৬-১৯৬৮) এবং ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি (১৯৬৬-১৯৬৯) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতার পর, তিনি দখলদার বাহিনীর দোসরদের বিরুদ্ধে বিচারের দাবিতে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের আহ্বান জানান।
১৯৭০-১৯৭৫ সালে তিনি বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭২ সালে তিনি 'খসড়া সংবিধান' রচয়িতা কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ফরিদপুর জেলার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫০ সালে যোবায়দা শামসুদ্দীনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ১৯৯১ সালের ১০ই জুলাই ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।