সঞ্জয় মজুমদার

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ৩:৩৫ এএম

শৈলজারঞ্জন মজুমদার: রবীন্দ্রসংগীতের এক অমূল্য সম্পদ

শৈলজারঞ্জন মজুমদার (১৯ জুলাই, ১৯০০ - ২৪ মে, ১৯৯২) ছিলেন একজন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ, রবীন্দ্র সংগীত প্রশিক্ষক, রবীন্দ্র সংগীতের স্বরলিপিকার এবং বিশ্বভারতীর রসায়ন বিজ্ঞানের শিক্ষক। তাঁর জন্ম ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার বাহাম গ্রামে। পিতা ছিলেন নেত্রকোণা সদরের আইনজীবী রমণীকিশোর দত্ত মজুমদার এবং মাতা ছিলেন সরলা সুন্দরী। ১৯১৭ সালে নেত্রকোণার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯২০ সালে কলকাতার মেট্রোপলিটন কলেজ (বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজ) থেকে আই.এসসি পাশ করেন। ১৯২২ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বি.এসসি এবং ১৯২৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে এম.এসসি (প্রথম শ্রেণীতে) পাশ করেন। ১৯২৭ সালে আইন পাশ করেন।

কিছুদিন আশুতোষ কলেজে পড়ানোর পাশাপাশি গবেষণাও করেন এবং পরে অল্পকাল নেত্রকোণার বার লাইব্রেরিতে ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল। ঠাকুরমার কাছে গান শেখেন এবং স্থানীয় লোকসংগীত শুনে অনেক গান আয়ত্ত করেন। বিদ্যাসাগর কলেজে পড়ার সময় সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুষ্ঠানেও অংশ নেন। ১৯২০ সালে কলকাতায় রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতা শুনে তিনি মুগ্ধ হন এবং রবীন্দ্র অনুরাগী হয়ে ওঠেন।

১৯৩২ সালে শান্তিনিকেতনে রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং রবীন্দ্রনাথের কাছে রবীন্দ্রসংগীতের শিক্ষা লাভ করেন। রবীন্দ্রসংগীতের স্বরলিপি রচনার কাজও শুরু করেন। হেমেন্দ্রলাল রায়ের কাছে ধ্রুপদী সংগীতে তালিম নেন। ১৯৩৯ সালে শান্তিনিকেতনের সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষ হন। ১৯৬০ সালে অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে কলকাতায় চলে আসেন এবং ‘সুরঙ্গমা’ নামক সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। ‘গীতবিতান’ ও ‘দক্ষিণী’ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান রয়েছে। প্রায় দেড়শো গানের সুরকার ছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের শেষ যুগের অনেক গানের স্বরলিপি তিনিই রচনা করেছেন এবং কয়েক খণ্ড স্বরবিতানের সম্পাদনা করেছেন। তিনি তানপুরা ও এস্রাজ ব্যবহার করতেন এবং জীবনের শেষ পর্যন্ত হারমোনিয়ামের বিরোধিতা করেছেন। রবীন্দ্রসংগীতের সংরক্ষণ ও শুদ্ধতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসামান্য। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেন, অরুন্ধতী দেবী, শুভ গুহঠাকুরতা প্রমুখ তাঁর উল্লেখযোগ্য শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম।

১৯৩০ সালে প্রথম নেত্রকোণায় রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন করেন এবং ১৯৪১ সাল পর্যন্ত উদযাপন চালিয়ে যান। তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী আত্মাবোধানন্দের (সত্যেন মহারাজ) সংস্পর্শে ছিলেন এবং আজীবন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে সংগীত আকাদেমি পুরস্কার এবং ১৯৮৫ সালে বিশ্বভারতী থেকে ‘দেশিকোত্তম’ সম্মাননা লাভ করেন। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি.লিট উপাধি প্রদান করে। ১৯৯২ সালের ২৪ মে কলকাতার সল্টলেকে তিনি প্রয়াত হন।

মূল তথ্যাবলী:

  • শৈলজারঞ্জন মজুমদার ছিলেন একজন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও প্রশিক্ষক।
  • তিনি রবীন্দ্রসংগীতের অসংখ্য স্বরলিপি রচনা করেছেন।
  • বিশ্বভারতীতে রসায়ন বিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন।
  • সংগীত আকাদেমি পুরস্কার এবং বিশ্বভারতীর দেশিকোত্তম সম্মাননা লাভ করেছেন।
  • নেত্রকোণায় প্রথম রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপনের উদ্যোগ নেন।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।