শিল্পী রানী কর্ণা: কত্থকের এক অমিত্র অমূল্য সম্পদ
রানী কর্ণা (জন্ম: ১৯৩৯ - মৃত্যু: ২০২৩) ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী, যিনি কত্থক নৃত্যের জগতে তাঁর অসাধারণ দক্ষতা এবং অবদানের জন্য সুপরিচিত। বিশেষজ্ঞরা তাঁকে কত্থকের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী হিসেবে বিবেচনা করেন। তিনি জয়পুর এবং লখনউ ঘরানার কত্থকের ঐতিহ্যকে একত্রিত করে নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:
রানী কর্ণার জন্ম বর্তমান পাকিস্তানের হায়দরাবাদে একটি সিন্ধি পরিবারে। তাঁর পিতার নাম ছিল আসানদাস কর্ণা। ১৯৪২ সালে তাঁর পরিবার দিল্লিতে চলে আসে। দিল্লিতে তিনি হিন্দু কলেজ থেকে উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তবে তিনি তার জীবন নৃত্যের জন্য উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেন।
নৃত্য জীবন:
ছোটবেলা থেকেই নৃত্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন রানী কর্ণা। প্রায় চার বছর বয়স থেকেই তিনি কত্থক, ওড়িশি, ভারতনাট্যম এবং মণিপুরী নৃত্য শিখতে শুরু করেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষক ছিলেন নারায়ণ প্রসাদ এবং সুন্দর প্রসাদ। পরবর্তীতে তিনি জয়পুর ঘরানার গুরু হীরালাল এবং লখনউ ঘরানার গুরু পণ্ডিত বিরজু মহারাজের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে ওড়িশার একটি পরিবারে বিয়ে করে তিনি ভুবনেশ্বরে চলে যান এবং সেখানে ওড়িশি নৃত্যের প্রখ্যাত গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের কাছ থেকে ১৯৬৬ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ লাভ করেন। তিনি অমুবি সিং, নরেন্দ্র কুমার এবং ললিতা শাস্ত্রী (যিনি রুক্মিণী দেবী অরুন্ডেলের শিষ্যা ছিলেন) এর কাছ থেকেও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
মঞ্চে অবদান:
রানী কর্ণা ভারত এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় সব বড় ধ্রুপদী নৃত্য উৎসবে অংশগ্রহণ করেন এবং অসংখ্য মঞ্চে তাঁর নৃত্য পরিবেশন করেন। তাঁর নৃত্যানুষ্ঠান যুক্তরাজ্য, রাশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দর্শকদের প্রশংসা লাভ করে।
সংস্কৃতি শ্রেয়স্কর ও শেষ জীবন:
১৯৭৮ সালে স্বামীর সাথে কলকাতায় স্থানান্তরিত হন রানী কর্ণা এবং 'সংস্কৃতিক শ্রেয়স্কর' নামক একটি নৃত্য একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন। এই একাডেমি কত্থক নৃত্যের প্রসার ও অন্যান্য পরিবেশন শিল্পকলাকে বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একাডেমির প্রধান কেন্দ্র কলকাতার যোধপুর পার্কে অবস্থিত এবং ভুবনেশ্বরে এর একটি শাখা রয়েছে। তিনি ২০১৩ সালে ৭৪ বছর বয়সে শেষ প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
সম্মান ও পুরস্কার:
কত্থক নৃত্যের প্রসারে অবদানের জন্য ২০১৪ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রদান করে। তাঁর অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মান রয়েছে।