লাকী আখান্দ: বাংলাদেশের সংগীতের এক অমূল্য সম্পদ
লাকী আখান্দ (৭ জুন ১৯৫৬ - ২১ এপ্রিল ২০১৭) বাংলাদেশের সংগীত জগতের এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি একজন বিশিষ্ট সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক এবং গায়ক ছিলেন। তার সুরে-সুরে সাজানো অসংখ্য গান এখনও বাংলাদেশের সংগীতপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। তার জীবন ও কর্মজীবন বাংলা সংগীতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় স্থাপন করেছে।
১৯৫৬ সালের ৭ জুন ঢাকার পাতাল খান লেনে জন্মগ্রহণ করেন লাকী আখান্দ। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি তার পিতার কাছ থেকে সংগীতের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি টেলিভিশন ও রেডিওতে শিশুশিল্পী হিসেবে সংগীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি এইচএমভি পাকিস্তানের সুরকার হিসেবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন এবং ষোল বছর বয়সে এইচএমভি ভারতের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান আর্ট কাউন্সিল থেকে "বাংলা আধুনিক গান" বিভাগে পদক লাভ করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী পরিচালিত "ঘুড্ডি" চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এই চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত "আবার এলো যে সন্ধ্যা" গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৮৪ সালে সারগামের ব্যানারে তার প্রথম একক অ্যালবাম "লাকী আখান্দ" প্রকাশিত হয়। এই অ্যালবামের "এই নীল মনিহার", "আমায় ডেকো না", "আগে যদি জানতাম" প্রভৃতি গান অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। তিনি হ্যাপী টাচ ব্যান্ডের সদস্য ছিলেন এবং তার ছোট ভাই হ্যাপী আখন্দের সাথেও বহু গানে কাজ করেছেন। হ্যাপী আখন্দের মৃত্যুর পর ১৯৮৭ সালে তার সংগীতচর্চা কিছুটা স্থবির হয়। তবে ১৯৯৮ সালে "পরিচয় কবে হবে" ও "বিতৃষ্ণা জীবনে আমার" নামে দুটি অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি আবারও সংগীত জগতে ফিরে আসেন। ২০০০ সালের পর "তোমার অরণ্য" নামে একটি মিশ্র অ্যালবামের সুর ও সঙ্গীতায়োজন করেন।
লাকী আখান্দ দীর্ঘদিন ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগে ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল মারা যান। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের সংগীত জগৎ গভীর শোকাহত হয়। তার ৬৩ তম জন্মবার্ষিকীতে গুগল তাকে গুগল ডুডল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
লাকী আখান্দের অবদান বাংলাদেশের আধুনিক সংগীতের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। তার সুর, তার কণ্ঠ, তার গান, তার সঙ্গীতচর্চা- সবকিছুই এক অনন্য স্বাদের সমন্বয়। তার গানগুলি বারবার শোনা হয় এবং আগামী প্রজন্মের কাছেও তার সুর-তাল তেমনিভাবে স্পর্শ করবে।
লাকী আখান্দ: বাংলাদেশের সংগীতের এক অমূল্য সম্পদ