যুগোস্লাভিয়া: বলকানের ইতিহাসের এক অধ্যায়
বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের মানচিত্রে যুগোস্লাভিয়ার অস্তিত্ব ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। 'দক্ষিণ স্লাভদের দেশ' (Jugoslavija) নামের এই রাষ্ট্রটি তিনটি ভিন্ন রাজনৈতিক সত্ত্বার ধারাবাহিকতা বহন করে। ১৯১৮ সালের ১লা ডিসেম্বর সার্বিয়া, মন্টিনিগ্রো এবং হলি রোমান সাম্রাজ্যের ক্রোয়েশিয়া-স্লোভেনিয়া অংশ মিলে প্রথম যুগোস্লাভিয়া গঠিত হয়। বেলগ্রেড ও পোদগোরিচা এর যৌথ রাজধানী ছিল। এই নবগঠিত রাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির আক্রমণের শিকার হয়(১৯৪১)। জার্মানি ছাড়াও বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি এবং ইতালি যুগোস্লাভিয়ার একাংশ দখল করে।
যুদ্ধের সময় মার্শাল জোসিপ ব্রোজ টিটোর নেতৃত্বে যুগোস্লাভিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি জাতীয় মুক্তি মোর্চা গঠন করে এবং জার্মান আগ্রাসনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৪৩ সালে টিটো একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করেন। ১৯৪৪ সালে যুগোস্লাভিয়ার জাতীয় বাহিনী এবং সোভিয়েত বাহিনীর যৌথ অভিযানে দেশটি মুক্ত হয়। ১৫,০০০ জার্মান সেনা নিহত এবং ৯,০০০ জনকে বন্দী করা হয়। ১৯৪৫ সালে যুগোস্লাভিয়া গণতান্ত্রিক ফেডারেল প্রজাতন্ত্র হিসেবে গঠিত হয়।
শীতলযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জের ধরে যুগোস্লাভিয়ার বিভিন্ন অংশ স্বাধীনতার দাবি জানাতে শুরু করে। ১৯৯১ সালে ক্রোয়েশিয়া এবং স্লোভেনিয়া, ১৯৯১ সালে উত্তর মেসিডোনিয়া এবং ১৯৯২ সালে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা স্বাধীন হয়। সার্বিয়া এবং মন্টিনিগ্রো ‘ফেডারেল রিপাবলিক অব যুগোস্লাভিয়া’ নামে কিছুকাল টিকে থাকলেও ২০০৬ সালে দুইটি দেশ স্বাধীন হয় এবং যুগোস্লাভিয়ার অস্তিত্বের ইতি ঘটে। কসোভো পরবর্তীতে ২০০৮ সালে সার্বিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
যুগোস্লাভিয়ার ইতিহাস জাতিগত দ্বন্দ্ব, সামরিক সংঘাত এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার দ্বারা চিহ্নিত। এটি বলকান অঞ্চলের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং এটির ভাগ্য ইউরোপের রাজনৈতিক ভূগোলের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।