ময়মনসিংহ সদর উপজেলা: বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা, যা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে সমৃদ্ধ। এটি ময়মনসিংহ শহরকে ঘিরে অবস্থিত এবং বর্তমানে এর অধিকাংশ এলাকা ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত। উপজেলার আয়তন ৩৮০.৭২ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ৭৭৫,৭৩৩ (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী)। উত্তরে ফুলপুর ও নকলা, দক্ষিণে ত্রিশাল ও ফুলবাড়িয়া, পূর্বে গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জ এবং পশ্চিমে মুক্তাগাছা ও জামালপুর সদর উপজেলা অবস্থিত। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
ঐতিহাসিক দিক থেকে, ময়মনসিংহ সদর ১৮৬৭ সালে থানা হিসেবে গঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। এই উপজেলায় মহারাজ শশীকান্তের বাড়ি, আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল, রাজ-রাজেশ্বরী ওয়াটার ট্যাঙ্ক, ময়মনসিংহ জাদুঘরে রক্ষিত মহাভারতের প্রাচীন পান্ডুলিপি, কষ্টিপাথরের বিষ্ণুমূর্তি, জয়দেবের গীতগোবিন্দের পান্ডুলিপি, চন্ডীদাসের কাব্যের পান্ডুলিপি, বিশ্বে প্রকাশিত প্রথম ডাকটিকেটের ফটোকপি, মুক্তাগাছার জমিদারদের খড়গ, পৃথিবীর মানচিত্র (১৬৪৫), কেদারনাথ মজুমদার প্রণীত বৃহত্তর ময়মনসিংহের মানচিত্র (১৭৭৯), দূর্গাবাড়ি মন্দির (১৮৬৭), গাঙ্গিনার পাড় জলাধার (১৯১১), শিবমন্দির, শম্ভুগঞ্জ রেলসেতু ইত্যাদি ঐতিহাসিক নিদর্শনাদি রয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে খাগডহর ইপিআর ক্যাম্প, দিঘারকান্দা গ্রামসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি আনন্দমোহন কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজসহ অনেক উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উপজেলায় অবস্থিত। উপজেলায় অনেক মসজিদ, মন্দির, গির্জাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ময়মনসিংহ সদর উপজেলা কৃষিকাজ, ব্যবসা, শিল্প, এবং পরিবহন ও যোগাযোগের উপর নির্ভরশীল। উপজেলায় ধান, গম, শাকসবজি, আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, লিচু, তরমুজ ইত্যাদি উৎপাদিত হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য পাকা ও আধা-পাকা রাস্তা এবং রেলপথ রয়েছে।