মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান

মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান: বাংলাদেশের রাজনীতির এক অম্লান নক্ষত্র

৯ মার্চ ১৯২৯ সালে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জন্মগ্রহণকারী জিল্লুর রহমান বাংলাদেশের রাজনীতির এক প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ভৈরব, একটি গ্রামীণ পরিবেশ, যা তার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হয়। তার পিতা মেহের আলী মিঞা ছিলেন একজন আইনজীবী এবং তৎকালীন ময়মনসিংহের লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জেলা বোর্ডের সদস্য। শিক্ষাজীবনে তিনি ভৈরব আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভৈরব কে.বি পাইলট মডেল হাই স্কুল এবং ঢাকা কলেজে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস এবং আইনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধ, এবং পরবর্তীকালের রাজনৈতিক আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৫৬ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি হন এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন, যেমন: সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। ১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন ময়মনসিংহ-৩২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তিনি গণতন্ত্র রক্ষা ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার চেষ্টা করেন। তার স্ত্রী আইভি রহমানও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় তিনি তার স্ত্রীকে হারান। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ২০ মার্চ ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হয়। তার জীবনকাল ধরে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্রের জন্য অবদান রেখে গেছেন।

মূল তথ্যাবলী:

  • জিল্লুর রহমান বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ছিলেন।
  • তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
  • তিনি ২০০৯ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
  • তার স্ত্রী আইভি রহমান ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলায় নিহত হন।
  • তিনি ২০ মার্চ ২০১৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।