বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দীন আহমেদ
মোহসীন উদ্দীন আহমেদ (জন্ম: ২৪ ডিসেম্বর ১৯৩৯ - মৃত্যু: ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৮১) বাংলাদেশের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্বের জন্য তিনি বীর বিক্রম খেতাব লাভ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। এই ঘটনা তার জীবন ও মৃত্যুকে আজও রহস্যময় ও বিতর্কিত করে তুলেছে।
প্রাথমিক জীবন ও সামরিক কর্মজীবন:
মোহসীন উদ্দীন আহমেদের জন্ম ১৯৩৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুর জেলার শ্রীনগর উপজেলায়। তার পিতার নাম মহিউদ্দীন আহমেদ এবং মাতার নাম বেগম নুরুন্নাহার। ভৌগোলিক বিষয়ে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নকালে ১৯৬৩ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৃতীয় পূর্ব বঙ্গ রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ:
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চলাইট শুরু হলে, তখন চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে কর্মরত মোহসীন উদ্দীন আহমেদ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ছেড়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন জি-ফোর্সের তৃতীয় পূর্ব বঙ্গ রেজিমেন্টে তিনি দায়িত্ব পালন করেন এবং ভারতে অবস্থানরত এক কোম্পানির অধিনায়ক হিসাবে কাজ করেন। সুনামগঞ্জ জেলার টেংরাটিলায় যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে তিনি বীর বিক্রম খেতাব অর্জন করেন।
জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ড ও মৃত্যু:
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর, চট্টগ্রামে ৬৯তম ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে কর্মরত মোহসীন উদ্দীন আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়। মেজর জেনারেল আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে একটি কোর্টমার্শালে তার বিচার হয় এবং ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৮১ সালে রাজশাহী কারাগারে ফাঁসি দেওয়া হয়। তার বিচারে অভিযোগকারীদের মধ্যে ছিলেন কর্নেল এএমএসএ আমিন, লেঃ কর্নেল আবু নঈম আমিন আহমেদ এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিরুল আজিজ চিশতি। মোহসীন উদ্দীনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম। আনোয়ার হোসেন, কর্নেল মোহাম্মদ আইনউদ্দীন এবং লেঃ কর্নেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম। এই বিচারে ১২ জন সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। মোহসীন উদ্দীনকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বিতর্ক ও রহস্য:
জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডে মোহসীন উদ্দীন আহমেদের জড়িত থাকার প্রমাণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকের মতে, তাকে রাজনৈতিকভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার রহস্য আজও অনেকের কাছে অজানা।