ইউসুফ আলী চৌধুরী, ডাকনাম মোহন মিয়া (২৯ ডিসেম্বর ১৯০৫ - ২৬ নভেম্বর ১৯৭১) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন প্রভাবশালী বাঙালি রাজনীতিবিদ। তিনি ভারত-বিভাগ ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় এবং মুসলমান সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জমিদার পরিবারের সন্তান হলেও তিনি ব্রিটিশ আমলে নির্যাতিত প্রজাদের জন্য আন্দোলন শুরু করেন এবং ব্রিটিশ শাসন বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
তার জন্ম ফরিদপুরে। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে ডিসেম্বর জন্মগ্রহণকারী মোহন মিয়া ফরিদপুরের ঈশান স্কুলে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষালাভ করেন। কৈশোরে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমেই রাজনীতিতে তার প্রবেশ ঘটে। পাকিস্তান আন্দোলন এবং মুসলিম লীগ পুনর্গঠনে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৩৭ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন ফরিদপুর জেলা মুসলিম লীগের সভাপতি (১৯৪১-১৯৫৩), বঙ্গীয় মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য (১৯৪১-১৯৪৭), পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক (১৯৪৭-১৯৫২)। ১৯৫৩ সালে মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে কৃষক-শ্রমিক পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৫০ সালে গণপরিষদ এবং ১৯৫৫ সালে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং এ.কে ফজলুল হক মন্ত্রিসভার কৃষি, বন ও পাট মন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি যুক্তফ্রন্টের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য প্রতিষ্ঠা, এ.কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে ১৯৫৭ সালে কৃষক-প্রজা পার্টির গোড়াপত্তন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট গঠন এবং পরবর্তীতে পিডিএম ও পিডিপি প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
শেষ জীবনে নুরুল আমিনের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (পিডিপি) যোগ দেন। আইয়ুব শাসনামলে স্বৈরশাসন বিরোধী ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি (ডাক) গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালে পিডিএম-এর সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তান সরকারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটিতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ১৮ নভেম্বর দলীয় প্রধান নুরুল আমিনের আহবানে করাচি যান এবং ২৬ নভেম্বর সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। তার পুত্র চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এবং চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফ পরবর্তীতে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।