যশোরের চৌগাছা: মুক্তির স্থান, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ভূমি
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যশোরের চৌগাছা এক অসামান্য ভূমিকা পালন করেছিল। 'স্বাধীনতার প্রবেশদ্বার' খ্যাত এই ঐতিহাসিক স্থানে ঘটেছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ট্যাংক যুদ্ধ এবং হাতাহাতি যুদ্ধ (মল্লযুদ্ধ)। ভারত সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত এই এলাকাটি ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর প্রাণপণ সংগ্রামের ফলে চৌগাছা শত্রুমুক্ত হয় এবং দেশের প্রথম মুক্ত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
ঐতিহাসিক ঘটনা:
- ২০ নভেম্বর ১৯৭১: মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর উভচর ট্যাংক বয়রা সীমান্তের কপোতাক্ষ নদী পার হয়ে যশোর সেনানিবাস দখলের অভিযান শুরু করে। ঝিকরগাছার ছুটিপুর থেকে কামানের গোলা নিক্ষেপ শুরু হয়।
- ২১ নভেম্বর ১৯৭১: জগন্নাথপুর (বর্তমান মুক্তিনগর) গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও মিত্র বাহিনীর মধ্যে এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। গোলাবারুদ শেষ হওয়ার পর উভয়পক্ষ এক অভূতপূর্ব মল্লযুদ্ধে লিপ্ত হয়।
- ২২ নভেম্বর ১৯৭১: পাকিস্তানি বাহিনী বিমান হামলা চালায়, মিত্র বাহিনী পাল্টা হামলা চালিয়ে দুটি পাকিস্তানি জেট জঙ্গি বিমান ধ্বংস করে।
- ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১: মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা যশোর সেনানিবাস ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। যশোর শত্রুমুক্ত হয়, এবং যশোরের মাটিতে ওড়ানো হয় বিজয়ের প্রথম পতাকা।
চৌগাছার গুরুত্ব:
চৌগাছা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অমূল্য স্থান অধিকার করে আছে। এখানকার যুদ্ধে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান। মল্লযুদ্ধের ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়। এই ঐতিহাসিক ঘটনাবলী চৌগাছাকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক হিসেবে স্থাপন করেছে। বর্তমানে মুক্তিনগর শহিদ সরণি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ এবং স্মৃতিফলক এই ঐতিহাসিক স্থানের স্মৃতি ধরে রাখছে।
স্থান:
- যশোর
- চৌগাছা
- জগন্নাথপুর (বর্তমান মুক্তিনগর)
- বয়রা
- কপোতাক্ষ নদী
- ঝিকরগাছা
- ছুটিপুর
- গরিবপুর
- ছোট সিংহঝুলি (বর্তমান মসিয়ূরনগর)
ব্যক্তি:
- মেজর মঞ্জুর
- ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর
- কবি শামসুর রাহমান
- মোবাশ্বের আলী
- শাহাজান আলী
- শহিদ সুজাউদ্দৌলা
সংগঠন:
- মুক্তিনগর শহিদ সরণি মাধ্যমিক বিদ্যালয়
ট্যাগ:
- মুক্তিযুদ্ধ
- চৌগাছা
- যশোর
- মুক্তিনগর
- ট্যাংকযুদ্ধ
- মল্লযুদ্ধ
- স্বাধীনতার প্রবেশদ্বার
- ১৯৭১
- বাংলাদেশের ইতিহাস