মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক (১৯১৫-১৯৭৭): বাংলাদেশের একজন সম্মানিত পীর ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি পীরসাহেব চরমোনাই নামে সুপরিচিত ছিলেন এবং চরমোনাইয়ের প্রথম পীর হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। তার সন্তান মাওলানা ফজলুল করীমের মৃত্যুর পর অনুসারীরা তাকে ‘দাদা হুজুর’ বলে সম্বোধন করতো।
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন:
১৯১৫ সালে (হিজরী ১৩৩৩; বঙ্গাব্দ ১৩১২) বরিশাল শহরের কীর্তনখোলা নদীর পূর্বপাড়ে অবস্থিত পশুরীকাঠি গ্রামে সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাকের জন্ম। তার পিতা ছিলেন সৈয়দ আমজদ আলী। পূর্বপুরুষরা (দাদার দাদা) বগদাদ থেকে বাংলায় হিজরত করে পশুরীকাঠি গ্রামে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তার চাচাতো ভাই সৈয়দ আলী আসগর লাকটিয়া গ্রামের সৈয়দ পরিবারের পূর্বপুরুষ।
শিক্ষা ও ধর্মীয় জীবন:
মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক কুরআন-হাদীসের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তার চাচাতো মামা মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ আব্দুল জব্বারের (ওরফে আহসানুল্লাহ) কাছে। পরবর্তীতে উজানীর ক্বারী মুহম্মদ ইব্রাহীমের কাছে ক্বিরআত-সহ কুরআন শিক্ষা লাভ করেন এবং ভোলা দারুল হাদীস আলিয়া মাদরাসা থেকে জামাআতে উলা পাশ করেন। এরপর ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন।
অনুসারী ও প্রভাব:
তার অসংখ্য অনুসারী ছিলেন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মাওলানা ফজলুল করীম, মুহাম্মদ আবুল বাশার (শাহতলীর পীর), মুহাম্মদ আজহারুল ইসলাম সিদ্দিকী (মানিকগঞ্জের পীর)।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা:
মাওলানা ইসহাক বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন এবং স্থানীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মেজর এমএ জলিল, ক্যাপ্টেন আবদুল লতীফ ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা তার কাছে পরামর্শ ও দোয়া নিতেন। তার প্রতিষ্ঠিত চরমোনাই জামিয়া রশিদিয়া আহসনাবাদ আলিয়া মাদ্রাসা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল ছিল এবং বরিশালের সরকারি কর্মকর্তারাও এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
লেখনীরাজি:
সৈয়দ ইসহাক বিভিন্ন বিষয়ে ২৭টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
পারিবারিক জীবন ও মৃত্যু:
তার তিন স্ত্রী ছিল। ১৯৭৭ সালে (১৩৮০ বঙ্গাব্দ; ১৩৯৬ হিজরী) ৬২ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং চরমোনাইতে তাকে দাফন করা হয়।