মতিউর রহমান মল্লিক: বাংলাদেশের এক মরমী কবি ও সংগীত শিল্পী
মতিউর রহমান মল্লিক (১ মার্চ ১৯৫৪ - ১২ আগস্ট ২০১০) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী কবি, সাহিত্যিক, সংগীত শিল্পী, সুরকার ও গীতিকার। তিনি বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ইসলামী ধারায় অসংখ্য গান ও কবিতা রচনার জন্য তিনি সুপরিচিত। অনেকের কাছে তিনি ‘সবুজ জমিনের কবি’, ‘মানবতার কবি’ এবং ‘মরমী কবি’ হিসেবে পরিচিত।
বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণকারী মল্লিক তার প্রাথমিক জীবন কাটান গ্রামীণ পরিবেশে। তার পিতা মুন্সি কায়েম উদ্দিন মল্লিক স্থানীয় জারীগানের দলের জন্য গান রচনা করতেন। মল্লিকের বড় ভাইও কবিতা আবৃত্তি করতেন ফররুখ আহমদের সাহিত্য আসরে। রেডিওতে গান শোনার মাধ্যমেই তিনি সুর ও কবিতার সাথে পরিচিত হন। প্রাথমিকভাবে তিনি প্রেমের গান রচনা করলেও পরবর্তীতে ইসলামী চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে ইসলামী ধর্মের উপর ভিত্তি করে গান ও কবিতা রচনা শুরু করেন।
বারুইপাড়া সিদ্দীকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি বাগেরহাট পিসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে যুক্ত ছিলেন।
কর্মজীবনে তিনি সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক, ‘বিপরীত উচ্চারণ’ সাহিত্য সংকলনের সম্পাদক, মাসিক কলম পত্রিকার সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশের ইসলামী গানের একজন বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ছিলেন এবং ১৯৭৮ সালে ‘সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী’ নামে একটি ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন গঠন করেন। এই সংগঠনের প্রভাব বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
মল্লিক অসংখ্য জনপ্রিয় গানের রচয়িতা ছিলেন। তিনি অনুবাদক হিসেবেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ‘পাহাড়ি এক লড়াকু’ নামে আফগান মুজাহিদদের উপর একটি উপন্যাসের অনুবাদ তার বিখ্যাত কর্ম। তিনি হযরত আলী ও আল্লামা ইকবালের কবিতাও অনুবাদ করেছেন।
সাহিত্যে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। ২০১০ সালের ১২ আগস্ট রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে কিডনী সমস্যায় মৃত্যুবরণ করেন।
মতিউর রহমান মল্লিকের জীবনী ও কর্মজীবন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলে আমরা আপনাদের অবহিত করব।