ভারতীয় পুলিশ সেবা (আইপিএস): একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ
১৯৪৮ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর ইন্ডিয়ান ইম্পেরিয়াল পুলিশের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে গঠিত হয় ভারতীয় পুলিশ সেবা (আইপিএস)। অখিল ভারতীয় সেবার অধীনে এই নাগরিক পরিষেবা ভারতের আইন-শৃঙ্খলা, অভ্যন্তরীণ ও সীমান্ত নিরাপত্তা, এবং গোয়েন্দা কাজের নেতৃত্ব প্রদান করে। আইএএস ও আইএফএস এর সাথে আইপিএস সর্বভারতীয় সেবার অংশ, যার কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য উভয়েরই অধীনে কাজ করেন।
ঐতিহাসিক পটভূমি:
১৮৬১ সালের ইন্ডিয়ান কাউন্সিলস অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে ভারতে আধুনিক পুলিশ ব্যুরোক্রেসির ভিত্তি স্থাপন করা হয়। তখন গঠিত হয় সুপিরিয়ার পুলিশ সার্ভিস, যা পরে ইন্ডিয়ান ইম্পেরিয়াল পুলিশ নামে পরিচিত হয়। ১৯০২-১৯০৩ সালে স্যার অ্যান্ড্রু ফ্রেজার ও লর্ড কর্জনের অধীনে পুলিশ সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠিত হয় যা ভারতীয়দের কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগের সুপারিশ করে। ১৯২০ সাল থেকে ইন্ডিয়ান ইম্পেরিয়াল পুলিশ ভারতীয়দের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ১৯৪৮ সালে ইন্ডিয়ান ইম্পেরিয়াল পুলিশের বদলে আইপিএস গঠিত হয়।
সংগঠন ও কাজ:
আইপিএস কর্মকর্তারা ইউপিএসসি পরিচালিত সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পান। রাজ্য পুলিশ সেবা থেকেও উন্নীত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সরদার বল্লভভাই প্যাটেল ন্যাশনাল পুলিশ একাডেমি, হায়দ্রাবাদে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আইপিএস এর অনুমোদিত ক্যাডার সংখ্যা ৪৯২০। আইপিএস কর্মকর্তারা রাজ্য পুলিশ, সিএপিএফ, এনএসজি, এনডিআরএফ, আইবি, র, এসপিজি, এনআইএ এবং সিবিআই-এর মতো সংস্থাগুলিকে নেতৃত্ব প্রদান করেন।
সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ:
আইপিএস কর্মকর্তারা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, দুর্নীতি, সামাজিক অসমতা, অতিরিক্ত কাজের চাপ, অর্থনৈতিক অসুবিধা, মনস্তাত্ত্বিক চাপ এবং মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হন। ২০১২ সালের দিল্লি গণধর্ষণ, ২০২০ সালের হাথরাস গণধর্ষণ এবং ২০০৮ সালের মুম্বাই আক্রমণের মতো ঘটনাগুলি পুলিশ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার প্রতি ইঙ্গিত করে।
সংস্কারের প্রচেষ্টা:
১৯৭৯ সালে ন্যাশনাল পুলিশ কমিশন গঠিত হয় এবং পুলিশ সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কমিটি ও কমিশন গঠন করা হয়, যেমনঃ রিবেয়েরো কমিটি, পদ্মনাভায়া কমিটি, মালিমাথ কমিটি, সোলি সোরাবজি কমিটি, প্রকাশ সিং এর পিআইএল। সুপ্রিম কোর্ট পুলিশ সংস্কারের জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করে।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি:
কিরণ বেদী, ভারতের প্রথম মহিলা আইপিএস অফিসার।
উপসংহার:
আইপিএস ভারতের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সংস্কার ও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে আইপিএস আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।