ভাওয়াল

আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮:০৮ এএম

ভাওয়াল: ঐতিহাসিক জমিদারি থেকে জাতীয় উদ্যান

ভাওয়াল নামটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে বিশেষ স্থান ধারণ করে। এটি একসময় একটি বিশাল জমিদারি ছিল, যার আয় ও পরিধি দিক থেকে ঢাকার নওয়াবদের পরেই দ্বিতীয় স্থানে ছিল। এই ঐতিহাসিক জমিদারিটি বর্তমানে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান হিসেবে পরিচিত। এই নিবন্ধে আমরা উভয় ভাওয়ালেরই - জমিদারি ও জাতীয় উদ্যান - ইতিহাস, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, স্থান এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানবো।

ভাওয়াল জমিদারি:

ভাওয়াল জমিদার বংশের উত্পত্তি মুন্সিগঞ্জের বজ্রযোগিনী গ্রামে বলে জানা যায়। এই বংশের বলরাম সতেরো শতকের শেষার্ধে ভাওয়াল পরগণার দৌলত গাজীর দীউয়ান হিসেবে কাজ করতেন। কৌশলে তিনি ও তার পুত্র শ্রীকৃষ্ণ গাজীদের বঞ্চিত করে জমিদারি অধিগ্রহণ করেন। ১৭০৪ সালে শ্রীকৃষ্ণকে ভাওয়ালের জমিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই পরিবার ১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিদারির মালিক ছিল।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর ভাওয়াল পরিবার আশপাশের অনেক জমি ক্রয় করে জমিদারির বিস্তৃতি ঘটায়। ১৮৫১ সালে জেমস ওয়াইজের জমিদারি কিনে নেয়ার মাধ্যমে তারা সম্পূর্ণ ভাওয়াল পরগণার মালিক হয়। ১৮৭৮ সালে কালীনারায়ণ রায়চৌধুরী ব্রিটিশ সরকার থেকে ‘রাজা’ উপাধি পান। তার পুত্র রাজেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী এই জমিদারির আরও বিস্তৃতি ঘটান। এই সময় ভাওয়াল জমিদারি ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও বাকেরগঞ্জ জেলায় বিস্তৃত হয় এবং পূর্ব বাংলার দ্বিতীয় বৃহত্তম জমিদারি হয়।

১৯১৭ সালের জরিপে দেখা যায়, ভাওয়াল পরিবার ২২৭৪টি মৌজায় ৪,৫৯,১৬৩ একর জমির মালিক ছিল। জমিদারির ব্যবস্থাপনা ছিল অত্যন্ত দক্ষ। রাজা নিজেই জমিদারি পরিচালনা করতেন। ১৯০৪ সালে জমিদারিটি ৮৩,০৫২ টাকা রাজস্ব প্রদান করে ও ৪,৬২,০৯৬ টাকা মোট আয় করে।

ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলা:

রাজেন্দ্রনারায়ণের মৃত্যুর পর তার তিন পুত্রের মধ্যে একজন সন্ন্যাসী হয়ে ১৯২০ সালে দীর্ঘ ১২ বছর পর পুনরাবির্ভাব হয় এবং তার জমিদারি দাবি করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯৩৫ সালে শুরু হয় বিখ্যাত ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলা। মামলাটি সমগ্র বাংলায়, এমনকি বিদেশেও ব্যাপক আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে। এটি সাহিত্য, নাটক ও চলচ্চিত্রেরও বিষয়বস্তু হয়।

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান:

ভাওয়াল জমিদারির একটা অংশ বর্তমানে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই উদ্যানটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গাজীপুর জেলায় অবস্থিত। ১২ হাজার ৪০৪ একর জুড়ে বিস্তৃত এই উদ্যানটিতে ২২১ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৬৪ প্রজাতির প্রাণী ( ১৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫ প্রজাতির পাখি ও ৫ প্রজাতির উভচর) রয়েছে। এই উদ্যানটি পর্যটকদের জন্য বিনোদন ও প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

মূল তথ্যাবলী:

  • ভাওয়াল ছিল পূর্ব বাংলার দ্বিতীয় বৃহত্তম জমিদারি।
  • ১৭০৪ সালে শ্রীকৃষ্ণ ভাওয়ালের জমিদার হন।
  • ১৯৩৫ সালে শুরু হয় বিখ্যাত ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলা।
  • ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
  • উদ্যানে ২২১ প্রজাতির উদ্ভিদ ও ৬৪ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - ভাওয়াল

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

ভাওয়াল এলাকায় পেঁয়াজ চাষের ব্যাপক কার্যক্রম চলছে।