বড়লেখা: মৌলভীবাজার জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা, প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধ ইতিহাসে পরিপূর্ণ। ৪৪৮.৮৬ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলা ২৪°৩৬´ থেকে ২৪°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০১´ থেকে ৯০°১৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে সিলেটের বিয়ানীবাজার, দক্ষিণে জুড়ী, পূর্বে ভারতের আসাম, এবং পশ্চিমে কুলাউড়া, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত। ২০ কিমি দৈর্ঘ্যের আন্তর্জাতিক সীমান্ত ভারতের সাথে এর সীমানা।
জনসংখ্যা প্রায় ২৫৭,৬২০; পুরুষ ১২৪,৩৭৭ এবং মহিলা ১৩৩,২৪৩। মুসলিম ২১৬,৭৪২, হিন্দু ৩৮,৬৫০, খ্রিস্টান ১৮৮৭, বৌদ্ধ ৫, এবং অন্যান্য ৩৩৬। মণিপুরী, খাসিয়া, সাঁওতাল প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করে। সোনাই ও জুড়ী নদী এ উপজেলার প্রধান জলাশয়। বিখ্যাত হাকালুকি হাওরের একাংশ (৭২.৪৬ বর্গ কিমি) বড়লেখার অন্তর্ভুক্ত।
১৯৪০ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালের ১ জুলাই উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ঐতিহাসিক দিক থেকে, ১৯৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের এক প্রচণ্ড যুদ্ধ বড়লেখার শাহবাজপুরে সংঘটিত হয়। ব্রিটিশ আমলে নানকার বিদ্রোহও এখানে ঘটেছিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ৪ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। বড়লেখা ৬ মে পর্যন্ত শত্রুমুক্ত ছিল, শাহবাজপুর, বড়লেখা, ছোটলেখা ও লক্ষ্মীছড়ায় ৪টি বধ্যভূমি ছিল।
খাজা মসজিদ (ষোড়শ শতাব্দী), মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের কাছে মাধব মন্দির প্রাচীন নিদর্শন। শিক্ষার হার ৫২.৪%; বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৬) উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কৃষি, অকৃষি শ্রমিক, ব্যবসা, চাকুরী প্রধান আয়ের উৎস। চা, সুগন্ধী আতর, আগরবাতি প্রধান রপ্তানি। ধান, গম, আলু, পান, চা প্রধান কৃষি ফসল। আম, জাম, কাঁঠাল প্রধান ফল। মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি পালনও আছে।
মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, সমনভাগ চা-বাগান লেক ও হাকালুকি হাওর দর্শনীয় স্থান। ১৯৫১ সালে কাঁঠালতলীতে তেলের সন্ধান পাওয়া গেলেও উচ্চ চাপের কারণে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কয়লা ও বনাঞ্চলের প্রচুর সম্পদ রয়েছে। পাকারাস্তা ১৮৫ কিমি, নৌপথ ৩১ কিমি। বিভিন্ন কুটির শিল্প, ধানকল, বরফকল, চা কারখানা উল্লেখযোগ্য। পুরাতন বড়লেখা বাজার, হাজীগঞ্জ বাজার, চান্দগ্রাম বাজার উল্লেখযোগ্য। বেশিরভাগ এলাকা পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন।