বৌদ্ধধর্ম বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মসমূহের অন্যতম। ষষ্ঠ শতাব্দী খ্রিস্টপূর্বে ভারতে উদ্ভব লাভ করে এ ধর্ম। সিদ্ধার্থ গৌতম, যিনি পরবর্তীতে বুদ্ধ নামে পরিচিত হন, তিনি এই ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা। ৫৬৩ খ্রিস্টপূর্বে লুম্বিনীতে (বর্তমান নেপাল) তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা শুদ্ধোধন কপিলাবস্তুর (বর্তমান নেপাল-ভারত সীমান্ত) রাজা ছিলেন। উনত্রিশ বছর বয়সে সিদ্ধার্থ সংসার ত্যাগ করে কঠোর সাধনায় লিপ্ত হন। ৩৫ বছর বয়সে বোধগয়ায় (বিহার, ভারত) বোধিজ্ঞান লাভ করেন এবং বুদ্ধ হন। তিনি ৪৫ বছর ধরে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বৌদ্ধধর্মের প্রচার করেন। ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্বে কুশীনগর (উত্তর প্রদেশ, ভারত) এ তাঁর মৃত্যু হয়।
বৌদ্ধধর্মের মূলনীতি হল চত্বারি আর্য্য সত্য (চার আর্য্য সত্য): দুঃখ, দুঃখের উৎপত্তি, দুঃখের নিরোধ এবং দুঃখ নিরোধের উপায়। এই উপায় অর্জনের জন্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ (আটগুণ পথ) অনুসরণ করতে হয়। অষ্টাঙ্গিক মার্গের অংশগুলো হলো: সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বচন, সম্যক কর্ম, সম্যক জীবিকা, সম্যক প্রচেষ্টা, সম্যক স্মৃতি এবং সম্যক সমাধি। বৌদ্ধধর্মে ত্রিশরণ (বুদ্ধ, ধর্ম, সংঘ) গ্রহণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, নির্বাণ অর্জনই বৌদ্ধধর্মের চূড়ান্ত লক্ষ্য।
বৌদ্ধধর্মের প্রধান শাখা দুটি হল থেরবাদ ও মহাযান। থেরবাদ মূলত শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচলিত। মহাযান পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপকভাবে অনুসৃত। বজ্রযানকে মহাযানের একটি ধারা বা পৃথক শাখা হিসেবে দেখা হয়, যা তিব্বতে জনপ্রিয়। বৌদ্ধধর্মের পবিত্র গ্রন্থ হল ত্রিপিটক, যা পালি ভাষায় লিখিত।
বৌদ্ধধর্ম এশিয়ার সংস্কৃতি ও সভ্যতায় গভীর প্রভাব ফেলেছে। বৌদ্ধ দর্শন, শিল্প, স্থাপত্য, রন্ধনশৈলী ও উৎসব এশিয়ার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আধুনিক মনোবিজ্ঞানেও বৌদ্ধ ধ্যানের প্রভাব লক্ষণীয়। পশ্চিমে বৌদ্ধধর্মের জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান। একবিংশ শতকেও বৌদ্ধধর্ম নতুন নতুন রূপ ধারণ করে প্রসার লাভ করছে।