কাশ্মীরের বান্দিপোরা জেলায় অবস্থিত ‘বাংলাদেশ’ নামক একটি গ্রামের ইতিহাস, ভূগোল ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রবন্ধ:
ভূমিকা:
কাশ্মীর, ভারতের একটি অংশ, বিশ্বের অন্যতম সুন্দর ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু কাশ্মীরের অনেক অজানা দিক রয়েছে, যার মধ্যে একটি হলো বান্দিপোরা জেলায় অবস্থিত ‘বাংলাদেশ’ নামক গ্রামটি। এই গ্রামটির নামকরণের পেছনে রয়েছে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, যা একটি চমৎকার ও অদ্ভুত ঘটনা।
অবস্থান ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য:
‘বাংলাদেশ’ গ্রামটি অবস্থিত কাশ্মীরের বান্দিপোরা জেলায়, উলার হ্রদের তীরে। শ্রীনগর শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামে পৌঁছাতে প্রায়শই উলার লেক ঘুরে যেতে হয়, যা মোট ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব। এই এলাকা পাহাড়ি ও জলপ্রপাতে পরিপূর্ণ। উলার লেক, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম মিঠা পানির লেক, ‘বাংলাদেশ’ গ্রামের সৌন্দর্যকে আরও বর্ণিল করে তুলেছে।
নামকরণের ইতিহাস:
১৯৭১ সালে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর, পাশের জুরিমাঞ্জ গ্রামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ফলে অনেক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। তাদেরকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য উলার লেকের ধারে নতুন করে বসতি স্থাপন করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, নতুন বসতিকে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ করা হয়। এই নামকরণের পেছনে কাশ্মীর সরকারের কোনো মন্ত্রী অথবা স্থানীয়দের নিজস্ব সিদ্ধান্ত ছিলো কিনা, তা নিয়ে স্পষ্টতা নেই।
জনসংখ্যা ও অর্থনীতি:
‘বাংলাদেশ’ গ্রামে প্রায় ৭০টি পরিবারে ৩০০ জনের বেশি লোক বসবাস করে। গ্রামবাসীদের জীবিকার উৎস প্রধানত উলার লেকের ওপর নির্ভরশীল। তারা মাছ ধরা, হাঁস-মুরগি পালন, পদ্ম চাষ এবং ‘সিংগারা’ (ওয়াটার চেস্টনাট) সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সম্প্রতি, পর্যটনের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে, অনেক গ্রামবাসী পর্যটন কাজেও জড়িত হয়েছে।
পর্যটন:
‘বাংলাদেশ’ গ্রামের সুন্দর প্রকৃতি ও উলার লেকের আকর্ষণে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। ‘উলার কনজার্ভেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’র উদ্যোগে এলাকার উন্নয়ন হচ্ছে। ‘ভিউপয়েন্ট’ নামে একটি বোর্ডওয়াক তৈরি করা হয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় একটি স্থান হয়ে উঠেছে।
উপসংহার:
কাশ্মীরের ‘বাংলাদেশ’ গ্রাম একটি দুর্লভ ও আকর্ষণীয় গ্রাম, যার নামকরণের পেছনে রয়েছে ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ঘটনা। পর্যটনের উন্নয়নের মাধ্যমে এই গ্রামের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।