বাঁকুড়া: পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদ
বাঁকুড়া শহর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার সদর দপ্তর। প্রাচীনকালে এটি 'সুহ্মভূমি' নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীকালে 'লাঢ়' বা 'রাঢ়' নামে পরিচিত হয়। 'রাঢ়' শব্দটির অর্থ 'লাল মাটির দেশ'। এই জেলার উত্তরে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিমে পুরুলিয়া, দক্ষিণে পশ্চিম মেদিনীপুর, এবং পূর্বে হুগলি জেলা অবস্থিত। দামোদর নদীর অবস্থান বাঁকুড়া জেলার উত্তর সীমান্ত বরাবর।
ইতিহাস:
বাঁকুড়া জেলার ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। মহাভারত, জৈন ধর্মগ্রন্থ আচারাঙ্গ সূত্র এবং অন্যান্য প্রাচীন লিপিতে এর উল্লেখ রয়েছে। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে রঘুনাথ মল্ল 'মল্ল রাজবংশ' প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় থেকে বাঁকুড়া অঞ্চল
মল্লভূমি
নামে পরিচিত ছিল। ১৭৬৫ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মল্লভূমি দখল করে নেয় এবং ১৮৮১ সালে আধুনিক বাঁকুড়া জেলা গঠিত হয়।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু:
বাঁকুড়া ছোটোনাগপুর মালভূমি এবং বাংলার সমভূমির সংযোগস্থলে অবস্থিত। উষ্ণ ও শুষ্ক জলবায়ু। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৪৪-৪৫°C পর্যন্ত উঠতে পারে, শীতকালে ৬°C পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় ১৪০০ মিলিমিটার।
অর্থনীতি:
বাঁকুড়ার অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। ধান, গম, ডাল, তৈলবীজ, পাট, মেস্তা, আলু, শুকনো লঙ্কা, আদা প্রভৃতি ফসল উৎপাদন হয়। রেশম, সুতি, তসরের বয়ন, পোড়ামাটির ঘোড়া তৈরি, পিতলের ডোকরা শিল্প, বালুচরি শাড়ির জন্য বাঁকুড়া বিখ্যাত।
জনসংখ্যা ও সাক্ষরতা:
২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, বাঁকুড়া জেলার জনসংখ্যা প্রায় ৩৫ লক্ষ। বাংলা এই জেলার প্রধান ভাষা। সাক্ষরতার হার ৭০% এর কাছাকাছি।
যোগাযোগ ব্যবস্থা:
বাঁকুড়া রেল ও সড়কপথে কলকাতা এবং অন্যান্য শহরের সাথে সংযুক্ত। বাঁকুড়া জংশন একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশন।
দর্শনীয় স্থান:
বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা মন্দির, মুকুটমণিপুর বাঁধ, ঝিলিমিলি, শুশুনিয়া পাহাড় প্রভৃতি বাঁকুড়ার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান।
উপসংহার:
বাঁকুড়া জেলা পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা, যার ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভৌগোলিক সৌন্দর্য এবং অর্থনীতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ।