বক্কা: মক্কার প্রাচীন নাম ও ইসলামী ঐতিহাসিক গুরুত্ব
বক্কা (আরবি: بَكَّةُ) কুরআনের তৃতীয় সূরা (আল ইমরান) এর ৯৬ আয়াতে উল্লেখিত একটি স্থান। এই আয়াত অনুসারে, 'মানবজাতির জন্য প্রথম ঘরটি ছিল বাক্কায়, যা ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শক।' মুসলিম পণ্ডিতদের মতে, বক্কা হলো ইসলামের পবিত্রতম শহর মক্কার একটি প্রাচীন নাম। মক্কা শব্দটি কুরআনে ৪৮:২৪ আয়াতে একবার উল্লেখিত হলেও, বক্কা মক্কার প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ নাম হিসেবে পরিচিত।
বেশিরভাগ মুসলিমের ধারণা মক্কা ও বক্কা সমার্থক, কিন্তু পণ্ডিতদের মতে, একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। বক্কা বলতে কাবা ও এর আশেপাশের পবিত্র স্থানকে বোঝায়, যখন মক্কা শহরের নাম। ইবনে মানুরের লিসান আল-আরবের মতে, বাজারের মতো ভিড়ের কারণে এ অঞ্চলের নামকরণ করা হয়েছে বক্কা।
বক্কার ব্যুৎপত্তি মক্কার মতো অস্পষ্ট। এর একটি অর্থ হল ‘সংকীর্ণ’। পাহাড়ে ঘেরা মক্কার উপত্যকার বর্ণনামূলক হিসেবেও একে দেখা হয়। কুরআনে মক্কার জন্য বক্কা শব্দটি ৩:৯৬ আয়াতে ব্যবহৃত হলেও, মক্কা শব্দটি ৪৮:২৪ আয়াতে ব্যবহার করা হয়েছে। দক্ষিণ আরবি ভাষায় ব এবং ম বিনিময়যোগ্য ছিল, এই কারণেই বক্কা ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে।
ইসলামী ঐতিহ্যে বক্কা হল সেই স্থান যেখানে হাজেরা ও ইসমাইল বসতি স্থাপন করেছিলেন। এটি বাইবেলের আদিপুস্তকের একটি সমান্তরাল কাহিনী। হাজেরার সাহায্যের সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার দৌড়ানোর ঘটনা, এবং জমজম কূপের উদ্ঘাটন বক্কার ইতিহাসের অংশ। কুরআন বর্ণনা করে যে, ইব্রাহিম তার পুত্র ইসমাইলকে কাবা নির্মাণে সহায়তা করেছিলেন। যদিও বাইবেলে ইব্রাহিমের আরবের দক্ষিণে ভ্রমণের উল্লেখ নেই।
ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন যে, ইসলাম পূর্ববর্তী সময়ে কাবা সংস্কারের সময় বক্কার উল্লেখপূর্ণ একটি শিলালিপি পাওয়া যায়। বক্কা নামটি কাবাকে আচ্ছাদিত কাপড় কিসওয়াতেও বোনা হয়ে থাকে।
বাকা উপত্যকার উল্লেখ গীতসংহিতা ৮৪-এও পাওয়া যায়, যদিও এটি বক্কা (মক্কা) থেকে আলাদা। কিছু সংশোধনবাদী পণ্ডিত মনে করেন যে বক্কা মক্কার সাথে একই স্থান ছিল না, বরং কোনো অন্য স্থান হতে পারে। তবে বক্কার সঠিক স্থান নির্ণয় এখনও অস্পষ্ট। আমাদের কাছে যখন আরও তথ্য পাওয়া যাবে তখন এই নিবন্ধটি আপডেট করা হবে।