সূর্যকান্ত ত্রিপাঠী ‘নিরালা’ (২১ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯ - ১৫ অক্টোবর, ১৯৬১) ছিলেন হিন্দি সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট কবি। তিনি ছায়াবাদ যুগের চারজন প্রধান কবির একজন হিসেবে স্বীকৃত। জয়শঙ্কর প্রসাদ, সুমিত্রানন্দন পন্ত এবং মহাদেবী ভার্মার সাথে তাঁর নাম জড়িত ছায়াবাদের উত্থান ও বিকাশে। উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত লেখাপড়া শেষ করে নিজে নিজেই হিন্দি, সংস্কৃত ও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যয়ন করেন। তিনি কবিতা ছাড়াও অনেক গল্প, উপন্যাস এবং প্রবন্ধ রচনা করেছেন।
নিরালার জীবনে অর্থনৈতিক দুর্দশা ছিল অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিন বছর বয়সে মায়ের এবং বিশ বছর বয়সে বাবার মৃত্যু তাঁর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লুর প্রাদুর্ভাবে তিনি তার স্ত্রী মনোহরা দেবী, কাকা, ভাই এবং ভগ্নিপতিকে হারান। মহিষাদলের একটি চাকরি করেও তিনি পারিবারিক অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালনে কষ্ট পেয়েছেন। এরপর তাঁর পুরো জীবন কেটেছে আর্থিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে।
তবে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও তিনি তার নীতি ও সাহস পরিত্যাগ করেননি। তিনি তাঁর কবিতায় কল্পনার পরিবর্তে বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলেছেন এবং হিন্দি সাহিত্যে মুক্ত ছন্দ প্রবর্তনের কৃতিত্ব তাঁর। ১৯৩০ সালে প্রকাশিত ‘পরিমল’ কাব্যগ্রন্থের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, “মানুষের মুক্তির মতো কবিতারও মুক্তি।”
নিরালা ১৯২০ সালের দিকে লেখালেখি শুরু করেন। ‘জন্মভূমি’ ছিল তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা। ‘জুহি কি কালী’ কবিতাটি দীর্ঘদিন তাঁর প্রথম রচনা হিসেবে ভুল বোঝা গেলেও পরবর্তীতে জানা যায় এটি ১৯২১-২২ সালে রচিত। কবিতা ছাড়াও, তিনি কথাসাহিত্য ও গদ্য রচনা করেছেন। তিনি ১৯১৮-১৯২২ সাল পর্যন্ত মহিষাদলে কাজ করেন। পরে সম্পাদনা, ফ্রিল্যান্স লেখা ও অনুবাদ কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ‘সমন্বয়’ এবং ‘মাতোয়াল’ নামক পত্রিকা সম্পাদনার সাথে যুক্ত ছিলেন। লখনউতে গঙ্গা পুস্তকমালা অফিসে ও ‘সুধা’ নামক মাসিক পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪২ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এলাহাবাদে বসবাস করে ফ্রিল্যান্স লেখালেখি ও অনুবাদ কাজ করেছেন। তাঁর প্রথম কবিতা ‘জন্মভূমি’ ১৯২০ সালের জুনে ‘প্রভাত’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
নিরালার কাব্যশৈলী ছিল চিত্রায়নের দক্ষতায় সমৃদ্ধ। তিনি অভ্যন্তরীণ অনুভূতি ও বহির্জগতের দৃশ্যকে একত্রিত করে প্রাণবন্ত ছবি তৈরি করেছেন। তাঁর কবিতায় দার্শনিক গভীরতা ও রহস্যবাদের ছোঁয়া লক্ষ্য করা যায়। এই রহস্যবাদ ক্ষণস্থায়ী, এবং তিনি সংগ্রামের সামনে চোখ ফেরাননি। খাড়িবোলি ভাষার উপর তাঁর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব ছিল এবং তিনি তাঁর অনুভূতি অনুযায়ী ভাষা ব্যবহারে বিশ্বাসী ছিলেন। হিন্দি ভাষার বিকাশে তাঁর অবদান অপরিসীম। তিনি তার কবিতায় হিন্দি ভাষার পূর্ণতাকে অক্ষুণ্ণ রেখেছেন। ১৯৬১ সালের ১৫ অক্টোবর এলাহাবাদে তাঁর মৃত্যু হয়।