নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন: নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন। ১৬২.৪৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই ইউনিয়নের ২০১১ সালের জনসংখ্যা ছিল ১২,৭৯৬ জন। হাতিয়া উপজেলার মূল দ্বীপের দক্ষিণে অবস্থিত এই ইউনিয়নের উত্তরে হাতিয়া চ্যানেল, পশ্চিমে হাতিয়া চ্যানেল ও ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার সাকুচিয়া দক্ষিণ ইউনিয়ন এবং দক্ষিণ ও পূর্বে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন হাতিয়া উপজেলার ১১নং ইউনিয়ন পরিষদ এবং হাতিয়া থানার আওতাধীন। এটি জাতীয় সংসদের ২৭৩নং নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালী-৬ এর অংশ।
ঐতিহাসিক দিক থেকে নিঝুমদ্বীপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর পূর্ব নাম ছিল চর ওসমান বা ইছামতীর চর। ওসমান নামের একজন বাথানিয়া প্রথম এখানে বসতি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে হাতিয়ার সাংসদ আমিরুল ইসলাম কালাম এর নাম নিঝুমদ্বীপ রাখেন। ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর আমিরুল ইসলাম কালাম সাহেবের দ্বীপ পরিদর্শনের সময় প্রাণহীনতা দেখে 'হায় নিঝুম!' বলে আক্ষেপ করেন, যার থেকে দ্বীপটির নতুন নামকরণ হয়। বাল্লারচর, চর ওসমান, কামলার চর এবং মৌলভির চর মিলিয়ে গঠিত এই দ্বীপটি প্রায় ১৪,০৫০ একর আয়তনের এবং ১৯৪০ সালের দিকে জেগে উঠে। ১৯৫০ সালের দিকে এখানে জনবসতি গড়ে উঠে। ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার পুরো দ্বীপটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৩ সালে দ্বীপটি নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন হতে পৃথক হয়ে স্বতন্ত্র ইউনিয়নের মর্যাদা লাভ করে।
নিঝুমদ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। এক দিকে মেঘনা নদী এবং তিন দিকে বঙ্গোপসাগর ঘিরে রেখেছে। চৌধুরীর খাল, পটকাখালী খাল, সোয়ানখালী খাল, ডুবাই খাল, ধামসাখালী খাল, ভট্রোখালী খাল, কাউনিয়া খাল, লেংটা খাল ইত্যাদি খাল এই দ্বীপের জীবনকে প্রভাবিত করে। বালুকাময় মাটি ও কিওড়া গাছের অভয়ারণ্য হিসেবেও নিঝুমদ্বীপ বিখ্যাত। এটি সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন বলে অনেকে মনে করেন। জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার ১৪.১% (২০১১ সালের আদমশুমারি)। এখানে ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থিত।
যোগাযোগ ব্যবস্থা জোয়ার ভাটার উপর নির্ভরশীল। হাতিয়া, ভোলা, কিংবা ঢাকা যাওয়ার জন্য জোয়ার ভাটা মেনে চলতে হয়। বন্দরটিলা থেকে নদী পার হয়ে হাতিয়ায় পৌঁছানো যায়। নিঝুমদ্বীপের অর্থনীতি প্রধানত মৎস্য আর কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল।