বাগদাদের নিজামিয়া মাদ্রাসা: মধ্যযুগের একটি ঐতিহাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
নিজামিয়া মাদ্রাসা (আরবি: المدرسة النظامية, অনুবাদ: 'আল-মাদ্রাসাতুল নিজামিয়াহ') ছিল মধ্যযুগের একটি বিখ্যাত ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১০৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদে সেলজুক সাম্রাজ্যের উজির নিজামুল মুলক কর্তৃক এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি মধ্যযুগের সবচেয়ে বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত। বিনামূল্যে শিক্ষাদানের মাধ্যমে এটি বিশাল সংখ্যক ছাত্রকে আকৃষ্ট করেছিল। ১০৯১ সালের জুলাই মাসে নিজামুল মুলক বিখ্যাত দার্শনিক ও ধর্মতত্ত্ববিদ ইমাম গাজালিকে (তখন তার বয়স ৩৩ বছর) এর অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেন।
গাজালির অধীনে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এখানে শিক্ষালাভ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বার্বার বংশোদ্ভূত আলমোহাদ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ইবনে তুমারত। নিজামুল মুলকের জামাতা মুগাতিল ইবনে বাকরি এখানে কর্মরত ছিলেন। গাজালি মাদ্রাসা ত্যাগ করার সময় (১০৯৬ খ্রিস্টাব্দে) এখানে ৩০০০ ছাত্র ছিল। এছাড়াও ১১১৬ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ আল শাহরাস্তানি এবং ১১৭০ এর দশকে বাহাউদ্দিন ইবনে শাদ্দাদ এখানে শিক্ষাদান করেছেন।
পারস্যের বিখ্যাত কবি সাদি শিরাজি ১১৯৫ থেকে ১২২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এখানে শিক্ষালাভ করেন। তিনি ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে হুলাগু খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলদের হাতে নিজামিয়া মাদ্রাসার ধ্বংসের সাক্ষী ছিলেন।
নিজামিয়া মাদ্রাসার পাঠ্যক্রমে প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় শিক্ষা, ইসলামি আইন, আরবি সাহিত্য ও গণিত ছিল। পরবর্তীতে ইতিহাস, গণিত, ভৌত বিজ্ঞান ও সঙ্গীত যুক্ত হয়। এটি শুধুমাত্র শিক্ষার কেন্দ্র ছিল না, বরং এটি ছিল মধ্যযুগের ইসলামি বিশ্বের বৃহৎ বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্র। এই মাদ্রাসার ইতিহাস মধ্যযুগীয় ইসলামি বিশ্বের শিক্ষা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাথে যুক্ত।
আশা করি এই তথ্যগুলো দিয়ে আপনার নিজামিয়া মাদ্রাসা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা হবে।