নারায়ণগঞ্জ: ঐতিহ্য, অর্থনীতি ও আধুনিকতা
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে, ঢাকার কাছে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ শহর ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পরিচিত। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরটি ১৯৮৪ সালে পৃথক জেলা হিসেবে গঠিত হয়, পূর্বে এটি ঢাকা জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
নারায়ণগঞ্জের নামকরণের পেছনে রয়েছে এক আকর্ষণীয় ইতিহাস। ১৭৬৬ সালে হিন্দু ধর্মীয় নেতা বিক্রম লাল পান্ডে (বেণুর ঠাকুর বা লক্ষী নারায়ণ ঠাকুর নামেও পরিচিত) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে এ অঞ্চল ক্রয় করেন এবং প্রভু নারায়ণের সেবায় ব্যয়ের জন্য শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী বাজারকে দেবোত্তর সম্পত্তি ঘোষণা করেন। এর থেকেই শহরটির নামকরণ হয় 'নারায়ণগঞ্জ'।
ঐতিহাসিক দিক থেকে নারায়ণগঞ্জ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ১৮৬৬ সালে এখানে ডাকঘর, ১৮৭৭ সালে টেলিগ্রাফ এবং ১৮৮২ সালে টেলিফোন সেবা চালু হয়। ১৮৭৬ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয় এবং ১৮৮৫ সালে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩১ সালে শহরে বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপিত হয়। ২০০১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুল পৌরসভাকে একত্র করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়।
অর্থনৈতিক দিক থেকে নারায়ণগঞ্জ বেশ সমৃদ্ধ। এটি পাট শিল্পের জন্য বিখ্যাত। 'প্রাচ্যের ড্যান্ডি' নামে পরিচিত এই শহরটিতে অসংখ্য পাটকল এবং টেক্সটাইল কারখানা রয়েছে। এছাড়াও, এটি দেশের বৃহত্তম নদীবন্দর। ২০২২ সালের ডিজিটাল জনশুমারী অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ আয়তনে দেশের ৮ম এবং জনসংখ্যায় ৫ম বৃহত্তম মহানগর।
নারায়ণগঞ্জ শুধু অর্থনীতির জন্যই নয়, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক অনেক স্থাপনা ও সংস্কৃতি রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে এমনটা আশা করা যায়।