নারায়ণগঞ্জ ও ভোলা: দুই জেলার ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক বৈচিত্র্য
বাংলাদেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা, নারায়ণগঞ্জ ও ভোলা, তাদের নিজস্ব ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। এই নিবন্ধে আমরা এই দুটি জেলার বিস্তারিত আলোচনা করব।
নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জ ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা, যা ঢাকা শহরের নিকটবর্তী অবস্থিত। ঐতিহাসিক সোনারগাঁও এ জেলার অন্তর্গত। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত এ জেলাটি সোনালী আঁশ পাটের জন্যেও বিখ্যাত। নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস অতি প্রাচীন। ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এ অঞ্চলের নামকরণ হয় নারায়ণগঞ্জ। এখানকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে সোনারগাঁও, লোক ও কারুশিল্প যাদুঘর, পানাম নগর, জিন্দা পার্ক, মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি, বালিয়া পাড়া জমিদার বাড়ি, এবং গোয়ালদী মসজিদ। ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০১-২০১১ এর দশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ৩.৫%। নারায়ণগঞ্জের অর্থনীতিতে পাট, তৈরি পোশাক, গার্মেন্টস, আরও অনেক শিল্পের অবদান রয়েছে। আদমজী জুট মিল একসময় এখানকার গুরুত্বপূর্ণ একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল। নারায়ণগঞ্জ শহর ঢাকার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকার কারণে এটি একটি উন্নততর অবকাঠামোর উপভোগ করে।
ভোলা:
ভোলা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বরিশাল বিভাগের অধীনে অবস্থিত একটি দ্বীপ জেলা। এর আদি নাম ছিল দক্ষিণ শাহবাজপুর। জেলাটি মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত এবং বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থান করছে। জে. সি. জ্যাক তার “বাকেরগঞ্জ গেজেটিয়ার”-এ বলেছেন যে, দ্বীপটি ১২৩৫ সালে তৈরি হওয়া শুরু করে এবং ১৩০০ সালে এখানে চাষাবাদ শুরু হয়। ১৫০০ সালে পর্তুগিজ ও মগ জলদস্যুরা এ দ্বীপে তাদের ঘাঁটি স্থাপন করে। ১৮২২ সাল পর্যন্ত ভোলা বাকেরগঞ্জ জেলার অংশ ছিল। ১৯৮৪ সালে এটি একটি স্বাধীন জেলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ভোলার নামকরণের পেছনে স্থানীয়ভাবে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। ভোলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঘুইঙ্গার হাটের মিষ্টি এবং ঘোষের দধি সারাদেশে বিখ্যাত। মনপুরা দ্বীপ, চর কুকরি মুকরি, ঢাল চর, এবং জ্যাকব টাওয়ার ভোলার দর্শনীয় স্থানের উল্লেখযোগ্য। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা 17,76,795। ভোলার অর্থনীতি মূলত কৃষিকাজ, মৎস্য ও পর্যটনের উপর নির্ভরশীল।
উপসংহার:
নারায়ণগঞ্জ ও ভোলা দুটিই বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলা, তাদের নিজস্ব ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব এই দুটি জেলাকে বাংলাদেশের মানচিত্রে বিশেষ স্থান দিয়েছে।