দুদু মিয়া (১৮১৯-১৮৬২): বাংলার ইতিহাসে একজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, ফরায়েজি আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামী।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
দুদু মিয়ার আসল নাম ছিল মুহসীনউদ্দীন আহমদ। তিনি ১৮১৯ সালে বর্তমান বাংলাদেশের মাদারীপুরের বাহাদুরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন ফরায়েজি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাজী শরীয়তুল্লাহ। ১২ বছর বয়সে জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে তাকে মক্কায় পাঠানো হয়। কলকাতা হয়ে মক্কা যাওয়ার পথে বারাসাতে তিনি নীল বিদ্রোহের নেতা তিতুমীরের সাথে দেখা করেন বলে ঐতিহাসিক তথ্য রয়েছে। মক্কায় তিনি ৫ বছর অধ্যয়ন করেন এবং ১৮৩৭ সালে দেশে ফিরে আসেন।
ফরায়েজি আন্দোলনের নেতৃত্ব:
১৮৪০ সালে পিতার মৃত্যুর পর দুদু মিয়া ফরায়েজি আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ব্রিটিশ ও তাদের দোসর জমিদার ও নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি বাংলা ও আসামের নিপীড়িত জনগণকে একত্রিত করেন। তিনি কোনো বিদ্রোহ ঘোষণা না করেই সম্পূর্ণ বিকল্প আর্থসামাজিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের চেষ্টা করেন। প্রজারা তার নেতৃত্বে নিপীড়নমূলক কর দিতে অস্বীকার করে। দুদু মিয়া পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করে ফরায়েজি সমাজকে সংগঠিত করেন এবং লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করে ইংরেজ ও তাদের দোসরদের প্রতিরোধ করেন। ১৮৩৮ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত ফরায়েজি অধ্যুষিত এলাকায় শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করে।
গ্রেফতার ও মৃত্যু:
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময় জমিদার ও নীলকরদের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদু মিয়া গ্রেফতার হন। ১৮৫৯ সালে মুক্তি পেলেও অসৎ জমিদারদের উস্কানিতে আবার বন্দী হন। কোন মামলা ছাড়াই ১৮৬০ সাল পর্যন্ত তাকে কলকাতার আলীপুরে বন্দী রাখা হয়। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর তার স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায় এবং তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ১৮৬২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় তার মৃত্যু হয়। পুরান ঢাকার ১৩৭ নং বংশাল রোডে তাকে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য:
দুদু মিয়ার জীবন ও কাজ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলে এই নিবন্ধটি আপডেট করা হবে।