তাফসীর (আরবি: تفسير, অনুবাদ 'ব্যাখ্যা') হল একটি আরবি শব্দ, যা সাধারণত কুরআনের ব্যাখ্যাকে নির্দেশ করে। যিনি তাফসীর করেন বা তাফসীর গ্রন্থ রচনা করেন তিনি “মুফাসসির” হিসাবে পরিচিত। ‘তাফসীর’ শব্দটি আরবি শব্দমূল ফা-সিন-রা থেকে উৎপত্তি হয়েছে যার অর্থ: ব্যাখ্যা করা, বিস্তৃত করা, খোলাসা করা।
কুরআনের প্রথম তাফসীরকারক হিসেবে সবার আগে রাসূল (সাঃ) এর নামই আসে; তিনিই ছিলেন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তাফসীরকারক এবং একমাত্র নির্ভুল তাফসীরকারী। কুরআনের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ তায়ালার পর তার ব্যাখ্যাই গ্রহণ করা হয়।
রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর সাহাবাগণ তাফসীরের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এভাবে একটি নতুন তাফসীর যুগের সূচনা হয়। খলিফা আবু বকর (রাঃ) সহ সমস্ত সাহাবাগণ তাফসীরের ক্ষেত্রে নিজেদের ব্যক্তিগত মতামত প্রদানে বিরত থাকতেন; তারা কখনো নিজের ব্যক্তিগত মতামতকে তাফসীর হিসেবে চালিয়ে দিতেন না। সাহাবাদের মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তাফসীরকারক ছিলেন ইবনে আব্বাস (রাঃ)। তার থেকে বর্ণীত তাফসীর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তাফসীর হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি ব্যতীত আরও অনেক সাহাবা তাফসীরের জন্য বিখ্যাত রয়েছেন।
সাহাবাগণের পর তাবেয়ীগণ তাফসীরের কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেন। তাবেয়ীগণের মধ্যে সবচেয়ে ভালো তাফসীর জানতেন মক্কাবাসীরা। কেননা তারা সরাসরি ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে তাফসীর শিখেছেন।
মুফাসসিরে কেরামগণ একজন তাফসীরকারকের জন্য বেশ কিছু যোগ্যতার বর্ণনা দিয়েছেন। সেগুলো হলো:
- কুরআন ও হাদিসের গভীর জ্ঞান
- আরবি ভাষা ও সাহিত্যের দক্ষতা
- ইসলামী আইন ও তত্ত্বের জ্ঞান
- ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষমতা
উপরোক্ত বিষয়সমূহ সম্পর্কে যদি কারো ইলম না থাকে, তাহলে সে ব্যক্তি মুফাসসির হিসেবে গণ্য হয় না। আর কোন ব্যক্তি যদি যোগ্যতা না থাকাবস্থায় নিজের মনগড়া তাফসীর করে তাহলে রাসূল (সাঃ) তার ব্যাপারে কঠোর ধমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি মনগড়া তাফসীর করবে তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
পবিত্র আল-কুরআন অনুসারে, তাফসীর প্রধানত দুই প্রকার:
1. আল-কুরআনের আল-কুরআন ভিত্তিক তাফসীর।
2. পবিত্র আল-কুরআনের আল-কুরআন ভিত্তিক তাফসীর নির্ভরশীল তাফসীর।
বিভিন্ন মুফাসসির বিভিন্ন দিক থেকে তাফসীরকে ভাগ করেছেন। তাফসীরের ইতিহাস, বিভিন্ন তাফসীর পদ্ধতি, বিখ্যাত মুফাসসিরদের জীবনী ও তাদের রচিত তাফসীর গ্রন্থাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তাফসীর সম্পর্কিত গ্রন্থাবলীতে পাওয়া যাবে।