ঝুমা আক্তার: এক অসাধারণ প্যারা-আর্চারের উত্থান
২০১৮ সাল। এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর জীবনের ধারা পাল্টে যায় ঝুমা আক্তারের। নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার জয়মঙ্গল গ্রামের এই তরুণী লিচু গাছে থেকে পড়ে গিয়ে স্পাইনাল কর্ডে আঘাত পান এবং চলৎশক্তি হারান। ৭ মাস বিছানায় কাটানোর পর ঝুমা হাল ছাড়েননি। সাভারের সিআরপিতে তিন মাস চিকিৎসা নিয়ে তিনি পুনরায় জীবনে ফিরে আসেন। এসএসসি পাশ করেন, বিয়ে করেন, এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী স্বামী মনির হোসেনের সাথে নতুন করে জীবন গড়ার চেষ্টা করেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধীত্ব কখনোই ঝুমাকে থামাতে পারেনি। শিবপুর শহীদ আসাদ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে তিনি সাভারে অনার্সে ভর্তি হন। সেখানে হুইল চেয়ার বাস্কেটবল খেলা শুরু করেন। পরে বাংলাদেশে প্যারা আর্চারি শুরু হলে তিনি এই খেলায় যোগ দেন এবং অল্প সময়েই অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেন।
২০২৩ সালে ঝুমা প্যারা অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন, যা বাংলাদেশের প্যারা আর্চারির ইতিহাসে প্রথম ঘটনা। আরেকজন প্যারা-আর্চার আল আমিন হোসেনের সাথে তিনি প্যারিস প্যারা অলিম্পিকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। শুক্রবার (৮ মার্চ) নারী কম্পাউন্ড ইভেন্টে পোল্যান্ডের মার্কিতান্তোভার সাথে টাইব্রেকিংয়ে পরাজিত হয়ে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নেন। তবুও তার অর্জন বাংলাদেশের প্যারা-ক্রীড়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে।
আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ফায়া ইন্টারন্যাশনাল প্যারা আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক জেতার মাধ্যমে ঝুমা প্যারা অলিম্পিকে অংশগ্রহণের টিকিট নিশ্চিত করেন। এই টুর্নামেন্টে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের তেরেসা ওয়ালেসকে পরাজিত করেন।
ঝুমার অর্জন এবং তার জীবনের সংগ্রাম বাংলাদেশের শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তার অবিচল স্পৃহা ও অদম্য সাহস পৃথিবীকে দেখিয়েছে যে, প্রতিবন্ধকতা জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে বাধা হতে পারে না।