চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা: ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল
নাচোল উপজেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। ২৮৩.৬৭ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলা ২৪°৩৮´ থেকে ২৪°৫১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°১৫´ থেকে ৮৮°২১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তর-পশ্চিমে গোমস্তাপুর, দক্ষিণে নবাবগঞ্জ সদর, পূর্বে তানোর ও নিয়ামতপুর উপজেলার সাথে এর সীমানা সংলগ্ন। উর্বর মাটির কারণে এখানে ধান চাষ ব্যাপক। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, নাচোলের জনসংখ্যা ১৪৬৬২৭; পুরুষ ৭২৮৯৫, মহিলা ৭৩৭৩২। মুসলিম ১৩০২০৫, হিন্দু ১২৪০১, খ্রিস্টান ২০৬৭ এবং অন্যান্য ১৯৫৪ জন। এখানে সাঁওতাল, মুন্ডা, ওরাওঁ, মাহালী প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
নাচোলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
১৯১৮ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত নাচোল ১৯৮৪ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। এই উপজেলা ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ১৯৪৯ সালে ইলা মিত্রের নেতৃত্বে সাঁওতাল কৃষকদের অগ্রণী ভূমিকায় এই আন্দোলন 'নাচোল বিদ্রোহ' নামেও পরিচিত। এই আন্দোলনের ফলে সাঁওতাল কৃষকরা জমিদারদের শোষণ থেকে কিছুটা মুক্তি পায়। মুক্তিযুদ্ধেও নাচোলের জনগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল; নাচোল-আমনুরা রেললাইনের ৩টি সেতু ধ্বংস করে পাকবাহিনীর অগ্রযাত্রা ঠেকানো হয় এবং ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে নাচোল থানায় পাকসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষ হয়।
অর্থনীতি ও সমাজ:
নাচোলের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি কৃষি (৭৩.২৭%)। ধান, গম, ডাল, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম প্রভৃতি ফল উৎপাদিত হয়। কুটিরশিল্পের মধ্যে মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ উল্লেখযোগ্য। শিক্ষার হার ৪৫.৫%। কলেজ, মাদ্রাসা, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় বিদ্যমান। নাচোল ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), নাচোল মহিলা কলেজ (১৯৯৩), নাচোল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৭) উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য পাকা, আধাপাকা ও কাঁচা রাস্তা এবং রেলপথ রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য স্থান:
আলী শাহপুর মসজিদ (ফতেহপুর), কলিহার জমিদার বাড়ি ও মল্লিকপুর জমিদার বাড়ি, উজিরপুর দরগা, নাচোল বাজার মন্দির ও দেউপাড়া মঠ। নাচোল হাট, রাজবাড়ী হাট, সোনাইচন্ডী হাট প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য হাটবাজার। মহানন্দা নদী এবং লক্ষ্মীকোল বিল ও দামাস বিল উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
নাচোল উপজেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এর উন্নয়নের জন্য আরও গুরুত্ব দান করা প্রয়োজন।