গ্রামীণ আধিপত্য

আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪:৪৩ এএম

বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের ক্ষমতার গতিপ্রকৃতি বুঝতে হলে গ্রামীণ আধিপত্যের ধারণাটি বুঝতে হবে। এটি গ্রামে বিদ্যমান ক্ষমতার কাঠামোকে বোঝায়, যেখানে ক্ষমতা বিভিন্ন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, অথবা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বন্টন ও প্রভাব বিস্তার করে। এই কাঠামো স্থায়ী নয়; বরং ঐতিহাসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে এটির পরিবর্তন হতে থাকে।

মোগল ও নবাবি আমল: ঐতিহাসিকভাবে, মোগল ও নবাবি আমলে গ্রামীণ আধিপত্যের কেন্দ্রে ছিল জমিদার, মাতব্বর, খান, চৌধুরী প্রভৃতি। জমিদাররা খাজনা আদায় এবং স্থানীয় বিচার ব্যবস্থায় প্রভাবশালী ছিলেন।

ব্রিটিশ আমল: ১৭৬৩ সালে মীর কাশেমের পরাজয়ের পর ব্রিটিশদের আগমনের ফলে গ্রামীণ আধিপত্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। ১৭৯০-১৭৯৩ সালের লর্ড কর্নওয়ালিসের প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে দারোগা পদ্ধতি ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে ব্রিটিশরা কেন্দ্রীয়ভাবে গ্রামের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। জমিদাররা ব্রিটিশদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে স্থানীয় মানুষদের শোষণ করত। ১৮৭০ সালের চৌকিদারি অ্যাক্ট এবং ১৮৮২ সালে লর্ড রিপনের স্থানীয় সরকার সংস্কার গ্রামীণ আধিপত্যের কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন এনেছিল।

পাকিস্তান আমল: পাকিস্তান আমলে ব্রিটিশ আমলের ঐতিহ্য ধারণ করে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা চালু ছিল। ১৯৫৯ সালের আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ এবং ১৯৬০ সালের নির্বাচন গ্রামীণ আধিপত্যে কেন্দ্রীয় রাজনীতির প্রভাব বৃদ্ধি করে। টাকাপয়সা ও রাজনৈতিক প্রভাব গ্রামে ক্ষমতার প্রধান নির্ধারক হয়ে ওঠে।

স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ: স্বাধীনতার পর গ্রামীণ আধিপত্যে আরও পরিবর্তন আসে। প্রথমদিকে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব, পরে জমি মালিকানা, শিক্ষা, ধর্ম, বিদেশে অভিবাসন এবং অকৃষি ব্যবসা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ১৯৮০ এর দশকে উপজেলা পরিষদের প্রতিষ্ঠা এবং এনজিও'র বর্ধিত ভূমিকা গ্রামীণ ক্ষমতার কাঠামোতে পরিবর্তন আনে।

২০০০ সালের পর: ২০০০ সালের পর থেকে নগদ অর্থ, সামাজিক পুঁজি, প্রযুক্তিগত ডিভাইস এবং শহুরে যোগাযোগ গ্রামীণ আধিপত্যের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে ওঠে। তবে ২০০৯ সাল থেকে কেন্দ্রীয় রাজনীতির প্রভাব আবার বৃদ্ধি পায়, এবং রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা, সন্ত্রাস ও প্রশাসনিক প্রভাব ক্ষমতার প্রধান নির্ধারক হয়ে ওঠে। ২০১৬ সাল থেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ব্যবহার গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোকে আরও কেন্দ্রীভূত করে।

বর্তমান: বর্তমানে বাংলাদেশে দ্বি-দলীয় রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে গ্রামীণ আধিপত্য প্রায় সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় রাজনীতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। গ্রাম সমাজের দীর্ঘ ঐতিহ্য হারাতে শুরু করেছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • মোগল ও নবাবি আমলে জমিদার, মাতব্বর প্রমুখ গ্রামীণ আধিপত্যের কেন্দ্রে ছিল
  • ব্রিটিশ আমলে দারোগা পদ্ধতি ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত গ্রাম নিয়ন্ত্রণে ব্রিটিশদের কেন্দ্রীয় ভূমিকা স্থাপন করে
  • পাকিস্তান আমলে কেন্দ্রীয় রাজনীতি গ্রামীণ ক্ষমতায় প্রভাব বিস্তার করে
  • স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে জমি মালিকানা, শিক্ষা, ধর্ম, অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে
  • ২০০৯ সাল থেকে কেন্দ্রীয় রাজনীতির প্রভাব আবার বেড়ে যায়, এবং দলীয় রাজনীতি গ্রামে প্রভাবশালী

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - গ্রামীণ আধিপত্য

২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

এই ঘটনাটি গ্রামীণ আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে ঘটেছে।