গোদাগাড়ী উপজেলা: রাজশাহীর একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা
বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার পশ্চিমে অবস্থিত গোদাগাড়ী উপজেলা, পদ্মা ও মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত বরেন্দ্রভূমির একটি অংশ। এই উপজেলার নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। একটি জনশ্রুতি অনুযায়ী, বৈষ্ণব ধর্মপ্রচারক শ্রী চৈতন্যদেবের একজন ভক্ত গোদা নিয়মিত গরুর গাড়িতে করে প্রেমতলীতে স্নান করতে যেতেন; এই ‘গোদার গাড়ী’ থেকেই ‘গোদাগাড়ী’ নামের উৎপত্তি বলে ধারণা করা হয়। আরেকটি মতানুসারে, ‘গোদা’ (দেহ) এবং ‘গারী’ (রক্ষা) শব্দদুটি মিলিত হয়ে গোদাগারী (নিরাপদ স্থান) নামকরণ হয়েছে, যা পরবর্তীতে গোদাগাড়ী রূপে পরিবর্তিত হয়েছে।
ঐতিহাসিক দিক থেকে, গোদাগাড়ী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৮৬৫ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৮৪ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। নবাব আলিবর্দী খাঁর আমলে, বর্গীয় হাঙ্গামার সময় নবাব পরিবার তাদের মূল্যবান সম্পদ নিয়ে এই অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এছাড়াও, গোদাগাড়ীতে দেওপাড়ার প্রশস্তি, শাহ সুলতানের মাজার, আলী কুলী বেগের মাজার এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন যেমন শেখেরপাড়ার স্মৃতিস্তম্ভ এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে আরও প্রতিষ্ঠিত করে।
গোদাগাড়ী উপজেলার আয়তন ৪৭৫.২৬ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ৩,৩০,৯২৪ (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী)। উপজেলার অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। ধান, গম, আলু, পাট, ছোলা, আখ, টমেটো ইত্যাদি ফসল উৎপাদিত হয়। মাছ চাষও একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। সুলতানগঞ্জ এলাকা পাঙ্গাস মাছ সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত। শিক্ষার দিক থেকে, উপজেলায় অনেক প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও কলেজ রয়েছে। তবে শিক্ষার হার ৪৬.৩০% এর আশেপাশে।
সংক্ষেপে, গোদাগাড়ী উপজেলা রাজশাহী জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী, কৃষিপ্রধান অঞ্চল, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং কৃষিকর্মের জন্য পরিচিত।