গুরুদাসপুর উপজেলা: নাটোর জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা
নাটোর জেলার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত গুরুদাসপুর উপজেলা, ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ। ১৫০০-১৬০০ খ্রিস্টাব্দে চাপিলা এ অঞ্চলের রাজশাহী অঞ্চলের সদরদপ্তর ছিল বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। মুঘল আমলের অনেক নিদর্শন এখনও এখানে দেখা যায়। ১৯১৭ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৮৪ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। গুরুদাস নামক এক পাটনীর নামানুসারে বা একজন গুরু গোবিন্দ মাঝির নামানুসারে এর নামকরণ হয়েছে বলে বিভিন্ন মত রয়েছে।
চলনবিল উপজেলার অন্যতম ঐতিহ্য। বর্ষায় এ বিলের সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। খুবজীপুরের চলনবিল জাদুঘর (১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত) এ অঞ্চলের ঐতিহ্যকে ধারণ করে রেখেছে। বোরো মৌসুমে ধানক্ষেতের সৌন্দর্য ও রসুনের আবাদে এ উপজেলা বিখ্যাত। নাজিরপুর ইউনিয়নের মোজাফ্ফর জাতের লিচুও বেশ খ্যাতিমান।
চলনবিল প্রায় ১৩ কিলোমিটার প্রশস্ত ও ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, পাবনার চাটমোহর, নাটোরের সিংড়া উপজেলার অংশ জুড়ে বিস্তৃত। বর্ষায় এটি একটি বিশাল জলাশয়, শীতে নানা প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। চলনবিলের আয়তন ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে, যার পেছনে পলি পড়া, অপরিকল্পিত বসতি স্থাপন, সড়ক নির্মাণ ইত্যাদি কারণ কাজ করছে। তবুও এটি মাছের প্রাচুর্যে ভরপুর। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ ও ঝিনুক-মুক্তা পাওয়া যায়।
গুরুদাসপুর উপজেলায় ১টি পৌরসভা, ৬টি ইউনিয়ন, ৬৩টি ওয়ার্ড, ১০৬টি মৌজা এবং ১২৮টি গ্রাম রয়েছে। জনসংখ্যা প্রায় ১,৯৪,২২৮, যার মধ্যে ৯৪.০৭% মুসলিম, ৫.৪৯% হিন্দু ও বাকিরা অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। সাক্ষরতার হার ৩৪.৯১%। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডিগ্রী কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় ইত্যাদি রয়েছে। কৃষি এই উপজেলার প্রধান অর্থনীতি। রসুন, পাট, তিল প্রভৃতি ফসলের সাথে আম, লিচু, কাঁঠাল প্রভৃতি ফলের আবাদও হয়। বাঁশের কাজ, বেতের কাজ, স্বর্ণকার্য প্রভৃতি কুটিরশিল্প বিদ্যমান। স্বাস্থ্য কেন্দ্র, চক্ষু হাসপাতাল ইত্যাদি সুবিধাও রয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এ উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।