কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়ন: একটি নদীবেষ্টিত চরের কাহিনী
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার অন্তর্গত কোদালকাটি ইউনিয়ন একটি নদীবেষ্টিত চর। এই চরটি ব্রহ্মপুত্র ও সোনাভরি নদীর বুকে অবস্থিত এবং চারদিকে নদী দ্বারা ঘেরা। কোদালকাটি ইউনিয়নের অবস্থান কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার পশ্চিমে। ইতিহাস বলছে, রাজিবপুর ইউনিয়নের অংশ ছিল কোদালকাটি। পরবর্তীতে মরহুম আঃ কুদ্দুস আলীর সহযোগিতায় এটি একটি স্বতন্ত্র ইউনিয়নে পরিণত হয়।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
কোদালকাটি ইউনিয়ন একটি দ্বীপ চর, যার আয়তন ৬১৯৯ একর (২৫.০৮৬ বর্গ কিলোমিটার)। ১৯৯১ সালের লোকগণনার তথ্য অনুযায়ী, ইউনিয়নের জনসংখ্যা ছিল ১৩,৭৭৮ জন। বর্তমানে ৫৬,০০০ জনের বেশি লোক এখানে বাস করে। ইউনিয়নে ২৯টি গ্রাম, ১৮টি গাঙ, এবং ৪টি মৌজা রয়েছে। নদী ভাঙনের কারণে প্রতিবছর জনসংখ্যার পরিবর্তন ঘটে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনীতি:
কোদালকাটি ইউনিয়ন রাজিবপুর উপজেলা সদর থেকে ৪.২৫ কিমি দূরে অবস্থিত। যোগাযোগ ব্যবস্থা সীমিত; নৌকা ও ভ্যানের মাধ্যমে যাতায়াত করতে হয়। নৌকা ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা এবং ভ্যান ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। কৃষিকাজ প্রধান পেশা। গানজিয়া নামক একটি স্থানীয় ধানের চাষ এখানে বিখ্যাত। এই চালের চাহিদা ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে বেশি। নদী ভাঙ্গন কৃষি ও অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
নদী ভাঙ্গন ও জনজীবনে প্রভাব:
ব্রহ্মপুত্র ও সোনাভরি নদীর ভাঙনের ফলে কোদালকাটি ইউনিয়নবাসী চরম ভোগান্তির শিকার। জমি, বাড়িঘর, এবং জীবিকা হারানোর ঘটনা প্রায়শই ঘটে। নদী ভাঙ্গনের কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং অন্যান্য সামাজিক সেবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। পুলিশি সেবা গ্রহণের জন্য অনেক দূর পথ পায়ে হেঁটে যেতে হয়। তাই রাজিবপুর থানা পুলিশ সপ্তাহে একদিন অস্থায়ী পুলিশি সেবা কেন্দ্র চালু করেছে।
উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ:
কোদালকাটি ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য নদী ভাঙ্গন রোধ করা অত্যন্ত জরুরি। সরকার কর্তৃক বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও স্থায়ী সমাধান এখনও দেখা যায়নি। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর পরিদর্শনের পর কিছু তাত্ক্ষণিক উদ্যোগ নেওয়া হলেও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের প্রয়োজন। কোদালকাটির জনগণ নদীভাঙন রোধের স্থায়ী সমাধান এবং সার্বিক উন্নয়নের দাবী জানিয়েছে।