কামরাঙ্গীরচর: ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ থানা
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ঐতিহাসিক ও জনবহুল এলাকা কামরাঙ্গীরচর। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীনে এই থানাটি ৫৫, ৫৬ এবং ৫৭ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত। ১৯৯১ সালের পূর্বে ঢাকার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি চর হলেও, সে বছর হক্কুল এবাদ আয়রন ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে লালবাগের সাথে যুক্ত হয়।
ইতিহাস ও নামকরণ: কামরাঙ্গীরচর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য নেই। ইতিহাসবিদ নাজির হোসেনের মতে, বুড়িগঙ্গা নদী পারাপারের সময় কামরাঙ্গী নামক এক সুন্দরী নারীর ডুবে মৃত্যু হয়, যার নামানুসারে এই চরের নামকরণ হয়। অন্যদিকে, ব্রিটিশ জরিপকারীরা এখানে কামরাঙ্গা মরিচের চাষ দেখে এ নাম রাখতে পারে বলে মনে করা হয়। আবার, মুঘল আমলের এক কামানের স্মৃতির সাথে জড়িত 'কামানের চর' থেকেও এই নামের উৎপত্তি হতে পারে বলে অনুমান করা হয়। ১৭শ শতাব্দীতে এই এলাকার বসতি স্থাপন শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়। ১৯১২ সালে সরকার ভাওয়াল রাজা থেকে এই জমি অধিগ্রহণ করে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও আয়তন: কামরাঙ্গীরচর থানার আয়তন ৩.৬৩ বর্গ কিলোমিটার। এটি উত্তরে হাজারীবাগ ও লালবাগ থানা, পূর্বে লালবাগ ও চকবাজার থানা এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমে কেরানীগঞ্জ উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত।
জনসংখ্যা ও জনমিতি: ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী কামরাঙ্গীরচর থানার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১,৪৩,২০৮। ঢাকা মহানগরীতে বস্তিবাসীর বৃহৎ সংখ্যা এই এলাকায় বসবাস করে। ২০০৬ সালের এক জরিপে প্রায় ৩ লক্ষ অধিবাসীর মধ্যে ২ লক্ষ ৬৫ হাজার বস্তিবাসী বলে জানা যায়।
অর্থনৈতিক কার্যকলাপ: কামরাঙ্গীরচরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা রয়েছে। গার্মেন্টস, স্টেশনারী, প্লাস্টিক ও আইসক্রিম কারখানা সহ বিভিন্ন ধরণের শিল্প কার্যকলাপ এখানে চালু আছে।
উন্নয়ন পরিকল্পনা: ২০২১ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস কামরাঙ্গীরচরে একটি আধুনিক কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। তবে, এই পরিকল্পনার ফলে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের উচ্ছেদ হতে পারে বলে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
উল্লেখযোগ্য তথ্য: কামরাঙ্গীরচর ১৯৯৮ সালে থানায় রূপান্তরিত হয়। ২০১৩ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীনে আনা হয়। বুড়িগঙ্গা নদী কামরাঙ্গীরচরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
অতিরিক্ত তথ্য: কামরাঙ্গীরচর সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য আমরা আপনাকে পরবর্তীতে আপডেট করব।